খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ মাঘ, ১৪৩১ | ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  অনন্তকাল সংস্কার চলবে কিন্তু নির্বাচন হবে না, এমনটি হতে পারে না : রিজভী
  মধ্যরাতে কেঁপে উঠলো দেশ, দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

চাকরি হারালেন সেই মানবিক পুলিশ সদস্য শওকত

গেজেট ডেস্ক

মানবিক পুলিশ সদস্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বন্দর জোনে কর্মরত কনস্টেবল শওকতকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল  তাকে চাকরিচ্যুত করা হলেও বিষয়টি জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল)।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিসি শাকিলা সোলতানা বলেন, কনস্টেবল হোক বা এসপি হোক, কেউ যদি অসুস্থতা কিংবা কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তখন তাকে নিয়মানুযায়ী শোকজ করা হয়। শওকত টানা ৭১ দিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে তাকে শোকজ করা হয়। তবে শওকত শোকজের কোনো জবাব না দেওয়ায় তার নামে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। তারপরও তিনি উপস্থিত হননি। এ কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

শওকতকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশে উল্লেখ করা হয়, ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

জানা গেছে, অসহায় রোগীদের নানা সময়ে সেবার ব্যবস্থা করে প্রশংসিত হয়েছিলেন কনস্টেবল শওকত। দীর্ঘদিন নীরবে কাজ করলেও ২০১৯ সালে ২৯ নভেম্বর নগর পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় তার বিষয়টি তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমানের সুনজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শওকতের নেতৃত্বে একটি ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’ চালু করেন।

সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাস্তায় স্বজনহীন কোনো মানুষ পড়ে থাকার খবর পেলেই ছুটে যেতেন এই ইউনিটের সদস্যরা। তাদের খাওয়া-দাওয়াসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। ইউনিট গঠনের আগে থেকেই রাস্তায় স্বজনহীন অসহায় কিংবা মানসিক রোগী যাদের হাসপাতালে স্থান পেত না সেসব রোগীদের নিজেদের টাকায় সেবা দিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কিছু সদস্য। আর তাদের নেতৃত্বে ছিলেন কনস্টেবল শওকত।

তবে অভিমানে চাকরি থেকে নিজে অব্যাহতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কনস্টেবল শওকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে আমি নিজে দরখাস্ত দিয়েছি। বুঝেনই তো আমার পোস্ট ছোট, কিন্তু কাজ বেশি। অনেক সময় আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে হয়। আমি টিভিতে কথা বলি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বলেন। বিষয়টি নিয়ে ঈর্ষান্বিত ছিলেন ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা। তারা বিষয়টি মেনে নেননি। যদিও পুলিশে এক ধরনের শ্রেণি বৈষম্য ছিল এবং আছে। সবমিলিয়ে আমার সঙ্গে যাচ্ছে না, আমি নিজেও পারছি না। আমার মানবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য এক ধরনের অভিমান নিয়ে আমি নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আগে আমাকে শুধু মানবিক কাজ করার জন্য সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমার সঙ্গে হিংসাত্মক আচরণ শুরু হয়। বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং করা হয়। এতে আমার ভালো কাজের ব্যাঘাত ঘটে। তারা আমাকে অনেকটা মানবিক কাজে নিরুৎসাহিত করে।’

চাকরিচ্যুতির পর নিজের পরিকল্পনার বিষয়ে শওকত বলেন, ‘আমার মানবিক কাজ চলমান আছে। এখন আমি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ায় আরও জোরালো হবে। এখন আমরা একটা বেওয়ারিশ হাসপাতাল করব। চাকরির জন্য যেটি করতে পারিনি। আমি নিজে কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করব।’

চাকরিচ্যুতির বিষয়ে শওকত হোসেন বলেন, ‘আমাকে মানবিক ইউনিট থেকে সরিয়ে একবার পোস্টিং করা হলো কর্ণফুলী থানায়, আরেকবার কুমিল্লায় পোস্টিং করা হলো। আমি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য তিনবার আবেদন করেছি। দুটি সিএমপি কমিশনার বরাবর ও একটি কুমিল্লা পুলিশ সুপার বরাবর। কিন্তু তারা সময়ক্ষেপণ করে আমার দরখাস্ত গ্রহণ করেননি। একপর্যায়ে আমি নিজে থেকে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তীতে তারা আমাকে চাকরিচ্যুত করে।’

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!