খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সোনারগাঁওয়ে টিস্যু গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২ ইউনিট
  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস

চাকরির পিছে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে তরুণদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

গেজেট ডেস্ক

পড়াশোনা শেষে চাকরির পিছে না ছুটে তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে নবম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

দেশের তরুণদের জন্য সরকারের নানা কর্মসূচির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উদ্যোক্তা হতে চাইল যে কেউ হতে পারে। শুধুমাত্র একটা পাস করে চাকরি পেছনে না ছুটে নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়া এবং নিজেরা অন্যকে চাকরি দেয়া, তরুণ সমাজের কাছে আমার এটাই থাকবে আবেদন।’

তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা নিয়ে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজে কাজ করবেন, অন্যকে কাজের সুযোগ দেবেন, চাকরির সুযোগ দেবেন, নিজেরা উদ্যোক্তা হবেন। সেই উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি, সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’

নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপে কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। আগামীতে দেশে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমি অবশ্য আমাদের পুরুষ সমাজকে একটু পরামর্শ দিতে পারি। আপনারাও ব্যবসা করেন। তা আপনাদের স্ত্রীর নামে যদি আপনারা এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন তাকেও একটু কাজ করার সুযোগ করে দেন। তাহলে সংসারের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরাও কিন্তু সেই ধরনের শিল্পায়নও করতে পারবে। তাতে উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হবে। সেই সুযোগটা আপনারা দিয়েন, অন্তত বাধা দিয়েন না।’

তিনি বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে সারা দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ১৭৭টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছে। ক্লাস্টারসহ সারা দেশে রয়েছে ৭৮ লাখ এসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নতুন করে একজন মানুষের কাজের ব্যবস্থা হলেও কমপক্ষে ৭৮ লাখ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।’

‘যত্রতত্র শিল্প নয়’

এসএমই ক্লাস্টারের উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার দেয়ার আশ্বাস দিলেও যেখানে সেখানে শিল্প করা যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যত্রতত্র কিন্তু শিল্প করা যাবে না। এটা বাস্তব। কারণ আমরা চাই আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করতে। খাদ্য চাহিদা কখনও কমবে না, কারণ দিনের পর দিন বাড়বে। কোভিড-১৯ এর পর এই চাহিদা আরও বেড়েছে। অনেক উন্নত দেশ এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে। আল্লাহর রহমতে আমাদের সেই সমস্যাটা নাই। করোনা দেখা দিল যখন তখন থেকেই আমি একটা নির্দেশ দিয়েছিলাম, যেভাবেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। সেরকম আমরা ব্যবস্থাও নিয়েছি।’

দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির বিষয়টি সামনে এনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট জায়গায় সেই শিল্পটা গড়ে তোলা, যাতে করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাটাও ঠিক থাকে, পরিবেশ ঠিক থাকে, পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। তাই আমি বলব, যত্রতত্র না করে ক্ষুদ্র বা কুটির শিল্প তো নিজেরাই করতে পারেন।’

এসএমই ফাউন্ডেশনেরও এ বিষয়ে ভূমিকা নেয়ার সুযোগ আছে বলে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে আমি এই ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ করব, আপনারা এই ব্যাপারটায় একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চায় তাহলে সে কোথায় কাজগুলো করতে পারে সুনির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে দেয়া, নিজের ঘরে বা জমিতে যদি করে, সেখানেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাত কীভাবে করবে সেগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে।’

কৃষি প্রক্রিয়াজাত ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অঞ্চলভিত্তিক আমাদের কিছু পণ্য উৎপাদন হয়। কৃষি ছাড়াও অন্য যেসব পণ্য উৎপাদন হয় সেগুলোকেও কাজে লাগানো। তারই ভিত্তিতে ওইসব অঞ্চলে শিল্প গড়ে তোলা যাতে কাঁচা পণ্যটা আমরা নিজেদের দেশ থেকে আহরণ করতে পারি। সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের মধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা জায়গায় বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাটা যদি ঠিক থাকে, তাহলে সেখানে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কোনো সমস্যা হয় না। আমরা সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।’

৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে অন্য খাতগুলোর মতো এসএমই খাতকেও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশে যেন শিল্পায়নটা হয়, একটা জায়গার মধ্যে না, তার জন্য ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য দেশটাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, শিল্পখাতের উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র বিমোচন, মানুষের আয় বৃদ্ধি করা, দারিদ্রের হাত থেকে এ দেশের মানুষকে মুক্ত করা। পাশাপাশি আমাদের নারী সমাজ, তারাও যেন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’

অনুষ্ঠানে বর্ষসেরা চার উদ্যোক্তাকে দেয়া হয় সম্মাননা। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (নারী) বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন হুমায়রা মুস্তফা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (পুরুষ) বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন নাজমুল ইসলাম এবং সৈয়দ মো. শোয়াইব হাসান। আর মাঝারি উদ্যোক্তা (পুরুষ) শাখায় সম্মাননা গেছে মো. আজিজুল হকের হাতে।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!