আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আশঙ্কার কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগেই জানিয়েছিলাম। সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে নেত্রীকে সতর্ক করতে আব্বা আমাকে তার কাছে পাঠিয়েছিলেন।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা, স্মৃতির পাতা থেকে জানা অজানা দুই একটি কথা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। সভায় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর আলী।
সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমার বাবা মোহাম্মদ হানিফ তথ্য পেয়েছিলেন কিছু একটা হতে পারে। আমাকে সুধাসদনে পাঠিয়েছিলেন, নেত্রীকে বার্তা পৌঁছে দিতে। নেত্রী সাংগঠনিক সফর শেষে সুধাসদনে আসেন এবং বিশ্রাম নেন। কারও সঙ্গে দেখা করছিলেন না। রাত তখন ১০টা পেরিয়ে গেছে। আমি সুধাসদনে উপস্থিত হই। প্রয়াত বজলু ভাইয়ের মাধ্যমে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে জানালাম, আপনাকে জানানোর জন্য আব্বা আমাকে পাঠিয়েছেন। সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে একটি আশঙ্কাজনক বার্তা আপনাকে পৌঁছে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাকে (শেখ হাসিনা) বললাম, একটা সম্ভাব্য হামলা চূড়ান্ত হয়েছে। সূত্র মতে, হামলাকারীরা ঢাকার ভেতরে চলে এসেছে। তাদের সম্ভাব্য হামলার স্থান সুধাসদনের এই বাসা, আপনার যাতায়াতের পথ এবং আমাদের অনুষ্ঠানস্থল। আব্বা বলেছেন, যেকোনো ভাবেই হোক আপনাকে আমাদের বাসায় (নাজিরাবাজার) চলে যেতে। এখানে আপনি নিরাপদ নন। আমি আরও বললাম, আপনারও অনেক সূত্র থাকতে পারে। আপনি একটু কনফার্ম করে নেন। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘পরে নেত্রী কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু হেসে বললেন, এতো ভয় পেলে কি রাজনীতি হয়? আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এ দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবনের সামান্য মায়া তার চেহারায় দেখতে পাইনি। কতো বিশাল সাহসের অধিকারী একটা মানুষ তিনি। নেত্রী আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। বললেন, দেখা যাবে কী হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিচে এসে বসে রইলাম। আমার মন মানে না। সুধাসদনে আক্রমণ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আমি দীর্ঘসময় সেখানে বসে রইলাম। মন চাচ্ছিল না এ অবস্থায় চলে যেতে। নেত্রী আমার কাছে খবর পাঠালেন, বাসায় চলে যেতে।’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘পর দিন অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রথম বোমাটি এসে পড়ল ঠিক আমার কাছাকাছি। মনে হলো দুটি পা ঝলসে গেলো। এক লাফে ট্রাকের মধ্যে উঠে গেলাম। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আমার পা আছে কি নেই। আমার বাবা মানবঢাল তৈরি করে নেত্রীকে বাঁচালেন। তার শরীরে স্প্লিন্টারের অনেক আঘাত ছিল। মাথা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছিল। তাকে বাঁচাতে পারিনি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এমন একটি হামলা হয়েছে। সেখানে তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা হলো। তিনি এখন লন্ডনে আয়েশ করে জীবন যাপন করছেন। তার শুধু যাবজ্জীবন নয়। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় পুনর্বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। একজন আহত ও বাবা হারা পরিবারের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে আমার এটাই একমাত্র দাবি। সূত্র: ঢাকা পোষ্ট।
খুলনা গেজেট/ টি আই