ফেনী শহরের রামপুরে স্বামীর ঘর থেকে মাহমুদা আক্তার শিরিন (২৩) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে রামপুরের তনু পাটোয়ারী বাড়ী থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। গৃহবধূ মাহমুদা আক্তার শিরিন রামপুর পাটোয়ারী বাড়ির শাহজালাল শাহীনের স্ত্রী ও দাগনভূঞার রাজাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রামচন্দ্রপুরের ছলু ভূঁঞা বাড়ির অহিদুর রহমানের মেঝো মেয়ে।
মাহমুদা আক্তার শিরিনের বাবার পরিবার দাবি করেছে, শ্বশুর বাড়ির স্বজনরা তাদের মেয়েকে হত্যা করেছে।
ঘটনার পর থেকে স্বামী শাহজালাল শাহীন ও ননদ খোদেজা বেগম পলাতক রয়েছে। জিঙ্গাসাবাদের জন্য রাতেই শিরিনের শ্বশুর ও শাশুড়িকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ রায়।
শিরিনের বড় বোন সুলতানা জানান, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রামপুর পাটোয়ারী বাড়ির বজলের রহমানের ছেলে শাহজালাল শাহীনের সাথে পারিবারিকভাবে শিরিনের বিয়ে হয়। ফেনী বড় বাজারে পাটোয়ারী টেলিকম নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা করেন শাহীন। বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন শিরিনকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। তারা শিরিনকে বাবার বাড়িতেও যেতে দিত না। বৃহস্পতিবার সকালেও সে আমাকে (বড় বোন) মোবাইলে জানায় তার স্বামী তাকে বকাঝকা ও গায়ে হাত তুলেছে।
সুলতানা আরো বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে শিরিন অসুস্থ তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে তার স্বামী শাহীন আমাদের ফোন করে। ফোন পেয়েই আমরা ছুটে এসে দেখতে পাই আমার বোন তার শোবার ঘরের মেঝেতে পরে আছে। এসময় তার স্বামী ও ননদ ঘরে ছিলো না। আমার বোনের কি হয়েছে জানতে চাইলে শাহীনের মা ছালেহা খাতুন বলেন, শিরিন রুমের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করেছে। ছালেহা বেগম আমাদের আরো জানান, তিনি জানালার কার্নিশ (সানশিট) দিয়ে ওই রুমে ঢুকে দেখতে পান শিরিন গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। তিনি তাকে সেখান হতে নামান। এসময় তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কথাবার্তা সন্দেহ হলে আমরা পুলিশকে খবর দেই। স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার বোন শিরিনকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
শিরিনের বাবা অহিদুর রহমান জানান, মাত্র ১০ মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে শাহীনের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। আমি একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, আমার ঘর-বাড়ি ভাল মানের না থাকায় শিরিনের স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার বাড়িতে যেত না। এমনকি শিরিনকে আমাদের সাথেও কোন প্রকার যোগাযোগ করতে দিত না।
মাহমুদার মা আলেয়া বেগম বলেন, শিরিনের স্বামী শাহীন, তার মা ও বোন মিলে পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ রায় জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গৃহবধু শিরিনকে বিছানার উপরে কম্বল জড়ানো অবস্থায় চিৎ করা পড়ে থাকতে দেখি। প্রাথমিক তদন্তে শিরিনের গলায়, হাতে এবং কোমরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাবার পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
খুলনা গেজেট/এনএম