খুলনা, বাংলাদেশ | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির হৃদপিন্ড, চট্টগ্রাম বন্দরকে সত্যিকার বন্দরে পরিণত করার কাজ চলছে : প্রধান উপদেষ্টা
  ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার ঘটনার রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার ৩

গুজরাটের বস্তি থেকে উচ্ছেদ করে যেভাবে ৭৮ জনকে সুন্দরবনে ছেড়ে দিল বিএসএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় নৌবাহিনী কর্তৃক বঙ্গপোসাগর তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকায় একটি চরের মধ্যে ফেলে যাওয়া ৭৮ জনকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করেছে কোস্টগার্ড। রোববার (১১ মে) রাত ১১টার দিকে তাদের শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে ৭৫জন বাংলাদেশি নাগরিককে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন ভারতীয়কে শ্যামনগর থানায় রাখা হয়েছে।

রাতেই তাদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। তাদের অধিকাংশের বাড়ি নড়াইল, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায়। আজ সোমবার (১২ মে) সকালে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার।

পুশ ইন করা একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা সকলেই ভারতের গুজরাটের সুরাট বস্তিতে থাকতেন এবং ছোটখাট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ২৬ এপ্রিল তাদের বস্তি ভেঙে গুড়িয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ওইদিন রাতেই তাদের আটক করা হয়। সেখান থেকে তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নেয়া হয় পুলিশ ক্যাম্পে। সেখানে চার দিন রাখার পর বিমানে করে আনা হয় কোলকাতায়। কোলকাতা থেকে তাদেরকে জাহাজে করে এনে গত ৯ মে বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নিয়ে চোখ বেঁধে একটি চরে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তারা পায়ে হেটে বনবিভাগের মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। রোববার কোস্টগার্ড তাদের মোংলায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও তাদের নাম পরিচয় সনাক্তকরণের কাজ শেষে রাতে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে। তারা বাংলাদেশী হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা গুজরাটে বসবাস করতেন।

তারা আরো জানায়, ২৬ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তাদের ঠিকমতো খেতে দেয়া হতো না। মাঝেমধ্যে মারধর করা হতো। এছাড়া তারা সবসময় আমাদেরকে গালিগালাজ করত।

এদিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন জানান, তাদের বাবা-মা গুজরাটে থাকাকালে সেখানেই তাদের জন্ম হয়। তাই জন্ম সূত্রে তারা ভারতীয় নাগরিক। তাদের সব ধরণের কাগজপত্র ছিল। ২০২৪ সালের তাদের সকল কাগজপত্র ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ে নেয়া হয়।

মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ওসি মোবারক হোসেন জানান, তার ফাঁড়িতে তিন দফায় মোট ৭৮ জন মানুষ আশ্রয় নেয়। শুরুতে ৩২জন এলেও পরবর্তীতে আরও দুই দফায় ৪৬ জন মানুষ পায়ে হেঁটে তার ফাঁড়িতে এসে পৌঁছায়।

বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মশিউর রহমান জানান, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে ৭৮ জন বাংলাভাষীকে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। এসব ভালাভাষী নাগরিকদের ভারতীয় একটি জাহাজ ও স্পিডবোর্ডযোগে গত ৯ মে বঙ্গপোসাগরের এলাকার একটি চরে ফেলে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা পায়ে হেঁটে নিকটস্থ মান্দারবাড়িয়া টহলফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে শনিবার রাতে তাদেরকে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, এভাবে আকস্মিকভাবে ৭৮জনকে বঙ্গপোসাগর তীরবর্তী নির্জন এলাকায় চরে ফেলে যাওয়ার ঘটনা সকলকে বিস্মিত করেছে। পরবর্তীতে বনবিভাগ ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সহায়তায় এসব মানুষকে মান্দারবাড়িয়া টহলফাঁড়িতে আশ্রয় দেয়া হয়। এসময় তাদের নাম পরিচয় ঠিকানা সনাক্তের পাশাপাশি তাদের সুন্থ রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার, চাল, ডাল ও পানিসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পাঠানো হয়।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!