জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, আদালত ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের সুযোগ পুনরায় চালু করা হয়েছে। খুব বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বাকি নেই। কাজেই মাইগ্রেশন চালু রাখলে খুব একটা অসুবিধা হবে না।
গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সপ্তম মেধাতালিকা থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন ফের চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি।
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ভার্চুয়াল এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে সপ্তম মেধাতালিকায় ভর্তি ও বন্ধ হয়ে যাওয়া ষষ্ঠ মেধাতালিকার মাইগ্রেশনের বিষয়ে কী হবে তা স্পষ্ট করেনি কমিটি।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গুচ্ছ ভর্তিতে অষ্টম মেধাতালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সপ্তম মেধাতালিকায় বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন না হওয়ায় ওই মেধাতালিকায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তবে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম মেরিট বাতিল হচ্ছে না। তবে ওই লিস্টে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন স্বাভাবিক নিয়মে হবে না। তাদের মাইগ্রেশন হবে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে। তবে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
কমিটি সূত্রে আরও জানা যায়, মূলত অষ্টম মেধাতালিকায় মাইগ্রেশন চালু রেখে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু থাকায় ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হতে কিছুটা বেশি সময় লাগবে। তবে আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত উপাচার্যরা।
সভায় উপস্থিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আদালতে হওয়া রিটের জবাব দিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে এটি করা হলে ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক পিছিয়ে যেত। রিটের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে পরবর্তী শুনানি হওয়া, আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত কোনো কিছুই সঠিকভাবে করা যেত না। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে ৩০ ডিসেম্বর গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপিত অষ্টম মেধাতালিকার ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)।
২৬ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের ভর্তি ঠিক রেখে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু রেখে জিএসটি কর্তৃক নির্ধারিত নতুন সময়সূচি অনুযায়ী পুনরায় সপ্তম এবং অষ্টম মেধাতালিকার ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে বলে ওয়েবসাইটে জানানো হয়।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক অথবা স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির অষ্টম মেধাতালিকায় ৪৭৮ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ডাক পেয়েছেন। তবে পরে অষ্টম মেধাক্রম থেকে ভর্তি কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম পর্বের জন্য অফার করা বিষয় তালিকা গুচ্ছ ভর্তি কমিটির পরবর্তী ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘আদালত ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের সুযোগ পুনরায় চালু করা হয়েছে। খুব বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বাকি নেই। কাজেই মাইগ্রেশন চালু রাখলে খুব একটা অসুবিধা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে বেশি মার্কস পেয়েও যারা মাইগ্রেশন করতে পারেনি, তাদের দুঃখ থাকবে না। যারা মাইগ্রেশন করবে তাদের সংখ্যা বেশি না। আর এর আগে যারা ভর্তি হয়েছে, তারা সেভাবেই থেকে যাবে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।’
ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমদ বলেন, ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শিগগিরই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। খুব সম্ভবত আজ না হলে আগামীকাল। আর হাইকোর্টের আদেশের পর অষ্টম মেধাতালিকা প্রকাশ স্থগিত করা হয়েছে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের সুযোগ অব্যাহত থাকার খবরে খুশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
নাফিয়ুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গুচ্ছ কমিটির এই সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। একই সঙ্গে কমিটির কাছে একটাই দাবি গোলমাল পূর্ণ সপ্তম মেরিট বাতিল করে পুনরায় ভর্তি প্রক্রিয়া সুন্দরভাবে চালু হোক।’
এর আগে, গত সোমবার রুবেল মিয়া, সাকিব আহমেদ ও আলভী নামে তিন শিক্ষার্থী গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে মাইগ্রেশন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।