অমর একুশের গানের রচয়িতা, প্রবীণ সাংবাদিক, কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ আগামী শনিবার (২৮ মে) ঢাকায় পৌঁছাবে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় তার মরদেহ দেশে আনা হচ্ছে।
বুধবার (২৫ মে) লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হাইকমিশন জানায়, সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ২০২ ফ্লাইটে শনিবার গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছাবে।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন মহান একুশের অমর সংগীতের রচয়িতা মরহুম আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে পাঠানোর সার্বিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
তিনি বলেন, সব ঠিক থাকলে ২৭ মে (শুক্রবার) সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে মরদেহবাহী ফ্লাইটটি যাত্রা শুরু করে ২৮ মে (শনিবার) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
একই ফ্লাইটে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদেরও ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার।
হাইকমিশনার মুনা জানান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে, তার প্রিয় স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
গত ১৯ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গাফ্ফার চৌধুরী। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮৮ বছর। ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
২০ মে শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইন মসজিদে তার প্রথম নামাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পূর্ব লন্ডনের ঐতিহাসিক শহীদ আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ২৩ মে লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশন গাফ্ফার চৌধুরী স্মরণে পূর্ব লন্ডনে এক মিলাদ মাহফিল ও শোকসভার আয়োজন করে।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুলে পড়ার সময় কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত কংগ্রেস হিতৈষী পত্রিকায় কাজ শুরু করেন।
১৯৪৯ সালে তার প্রথম গল্প ছাপা হয় সওগাত পত্রিকায়। পরে দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক সংবাদ, মাসিক সওগাত, মাসিক নকীব পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাক–এ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জয় বাংলা, যুগান্তর ও আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেন।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেসকো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।