খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ মাঘ, ১৪৩১ | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ডে

গল্লামারী নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ থমকে আছে, যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ

একরামুল হোসেন লিপু

শুরু থেকেই ধীর গতিতে চলছিল কাজ। এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রযুক্তিগত মতানৈক্য, প্রকল্পের বাজেটের তারতম্য, ভেরিয়েশনের বাড়তি কাজের জন্য অতিরিক্ত ১৩/১৪ কোটি টাকার সুরাহা না হওয়ায় থমকে গেছে খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গল্লামারী নতুন সেতুর কাজ। গত ১৬ মাসে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। গুরুত্বপূর্ণ সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই সেতু এলাকায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের।

বাড়তি ২০ শতাংশ অর্থাৎ ভেরিয়েশনের ১৩/১৪ কোটির টাকার সুরাহা না হলে সেতুর নির্মাণ কাজের সমাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (NDE)’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা-চুকনগর- সাতক্ষীরা জাতীয় মহাসড়কের ময়ূর নদীর উপর ৪ লেন বিশিষ্ট স্টিল আর্চ গল্লামারী সেতু নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয় ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর। এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (NDE) ৮ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজ শুরু করে। কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতুটির নির্মাণ কাজ ১৮ মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের ৩০ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় ইতিমধ্যে কাজের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, সড়ক বিভাগের ব্রিজ ডিজাইন ডিভিশনের এ জাতীয় স্টিল নেটওয়ার্ক আর্চ ব্রিজ নির্মাণের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় ব্রিজের ডিজাইনের ত্রুটি দেখা দেয়। ত্রুটি মেরামতের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারতীয় পরামর্শক সন্দ্বীপ গুহানিয়োগীকে। তার পরামর্শে অনেক খাতে খরচ বেড়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, কার্যদেশ অনুযায়ী ৬৭ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা চুক্তিমূল্য হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী সংযোগ সড়কসহ ব্রীজের কাজ সম্পন্ন করতে মোট ব্যয় হবে ৮২ কোটি টাকা।

প্রকল্পের কাজে ধীরগতি এবং নির্মাণ কাজ থমকে থাকা সম্পর্কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক অপূর্ব কুমার বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রকল্পের কাজে ৪০ মিটার পাইলিং ডিজাইনে ধরা ছিল, যেটা সাফিশিয়েন্ট ছিল না। এ কারণে প্রথম অবস্থায় লোড টেস্ট ফেল করে। পাইলের Length ওভাবে কাজ করে গেলে প্রকল্পটি হুমকির সম্মুখীন হবে। এরপর ৪০ মিটার পাইলিংয়ের জায়গা ৮ মিটার বৃদ্ধি করে ৪৮ মিটার করে পাইলগুলো কাস্টিং করা হয়েছে। শুরুতে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে বা ডিজাইনটা রিচেঞ্জ করা এগুলোর ব্যাপারে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। ডিপার্টমেন্ট থেকে টাইমলি আমাদের বলতে পারেনি এটা করতে হবে কি না? এভাবে ৩-৪ মাস সময় ব্যয় হয়েছে। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্রিজ পরিদর্শনে আসবেন। তিনি আসার পূর্বে অগোছালো প্রকল্পের সাইট পরিষ্কার রাখতে হবে। একারণে ২-৩ মাস কাজ বন্ধ ছিল। এরপর পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে যখন পাইল ক্যাপের কাজ করতে যাব তখন আমরা দেখি গ্রাউন্ড লেভেল থেকে ৪ মিটার নিচে নামতে হবে। এরকম একটা বিজি এরিয়ায় কোন আনফরচুন সিচুয়েশন যাতে তৈরি হতে না পারে সেজন্য আমরা ১২ মিটার সিট পাইল ড্রাইভ করেছি। এর জন্য বাড়তি আমাদের ২ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। পাইল করার জন্য যে প্রভিশনটা ধরা নেই সেটা আমাদের ধরে কাজ করে উঠে আসতে হয়েছে। বাড়তি এই টাকাগুলো আদৌ পাবো কিনা সে বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি, ডিসিশন পেন্ডিং আছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ আমাদেরকে বলেছে কনসিডার করবে।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)’ র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ব্রিজের কাজ থমকে আছে এটা সঠিক নয়। আপাতত কাজ করার কোন সুযোগ নেই। ব্রিজের নিচের অংশের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন উপরের অংশে স্টিল স্ট্রাকচারের কাজ বাকি। স্টিল ফেফ্রিকেশনের কাজ ফ্যাক্টরিতে চলমান আছে। ফ্যাক্টরিতে স্টিলের স্ট্রাকচারগুলো পার্ট বাই পার্ট রেডি করে তারপর সেটআপ করতে হবে। আশা করা যায় মার্চ /এপ্রিলের মধ্যে স্টিল স্ট্রাকচারের মালামালগুলো রেডি হয়ে চলে আসবে।

ব্রিজের ডিজাইনের সুরাহা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আর কোন সমস্যা নেই। মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল টিম আছে তারা এটা চূড়ান্ত করেছেন।

ভেরিয়েশনের বাড়তি অর্থ খরচের বিষয়টি হাই অথরিটিকে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। তিনি বলেন, মাঝ পথে এসে ব্রিজের নির্মাণ কাজ থেমে কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিচ্ছি ব্রীজের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!