খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ
  অ্যান্টিগা টেস্ট: ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৪০/২

গরমে ঘোল-মাঠা ও টক মিষ্টি দইয়ের চাহিদা বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র তাপদাহে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে চিকিৎসকরা বেশি বেশি করে বিশুদ্ধ পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন, ডাবের পানি, তরমুজ খেতে বলছেন। এসব পানীয় জলের পাশাপাশি শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে মানুষ পুষ্টিগুণে ভরপুর ঘোল-মাঠা ও টক-মিষ্টি দই খাচ্ছেন প্রচুর পরিমাণে। খুলনায় তাপদাহ বৃদ্ধির পর থেকে নগরীর বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে এসবের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিক্রয়ও বেড়েছে প্রচুর পরিমাণে।

দৌলতপুর পশুপতি মিষ্টির দোকানের স্বত্বাধিকারী সুখদেব ঘোষ খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রচন্ড তাপদাহের কারণে গত কয়েকদিনে টক দই, ঘোল এবং টক মিষ্টি দইয়ের চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দই চিড়া এবং ঘোল চিড়া খাওয়ার কাস্টমারের চাপ বেড়েছে। অন্যান্য মিষ্টান্নের পাশাপাশি প্রতিদিন ১৪ কেজি ঘোল, ২০/২৫ কেজি টক দই এবং ৫০/৬০ কেজি টক মিষ্টি দই বিক্রি করার পরও চাহিদা থেকে যাচ্ছে।

দৌলতপুর ঘোষ ডেয়ারীর মালিক গোবিন্দ ঘোষ বলেন, টক দই প্রতিদিন আগে যেখানে ১০ থেকে ২০ কেজি বিক্রি হতো গরমের কারণে এখন প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঘোল প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ কেজি এবং মাঠা ১৫ থেকে ২০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। গরম বাড়ার পর থেকে টক মিষ্টি দইয়েরও চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি গরমের কারণে ঘোল চিড়ে এবং দই চিড়ে বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশী।

ফুলবাড়িগেট ভাই ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক প্রশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, গরমের কারণে ঘোলের চাহিদা বেড়েছে। প্রতিদিন ২০ কেজির মতো ঘোল তৈরি করি। সব বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এরপরও চাহিদা থেকে যায়। ২০ থেকে ৩০ কেজির মতো টক দই বিক্রি হচ্ছে। টক মিষ্টি দইয়ের কাস্টমার ও বেড়েছে প্রচুর পরিমাণে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি বিক্রি করার পরও চাহিদা থেকে যাচ্ছে।

ফুলবাড়ীগেট আদি ঘোষ ডেয়ারীর কর্মচারী মনিরুল ইসলাম বলেন, গরম বাড়ার পর থেকে টক মিষ্টি দই বিক্রি বেড়েছে। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ২০ কেজি ঘোল বিক্রি হতো এখন সেখানে ৪০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। এরপরও চাহিদা থেকে যায়। টক দই বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন ২০/২৫ কেজি। গরমের কারণে গোল চিড়া এবং দই চিড়া খাওয়ার কাস্টমার বেড়েছে প্রচুর।

দৌলাতপুর সেফ ফুড সুইটস ‘র ম্যানেজার মনির হোসেন বলেন, গরমের কারণে পূর্বের তুলনায় আমাদের দই বিক্রি বেড়েছে। সেফ ফুডের স্পেশাল মাঠা চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে পারছি না। ২০/২৫ বোতল মাঠা বেলা ১২ টার আগেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

টক দই এর উপকারিতাঃ

গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত টক দই খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। হজম শক্তি বাড়ে। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। দইয়ে থাকা বিভিন্ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর পদার্থকে আটকাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে আছে প্রোটিন ফ্যাট ক্যালসিয়াম ফসফরাস, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ ইত্যাদি নানা উপাদান। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হজমে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

ঘোলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

ঘোলের স্বাস্থ্য গুণ কম তো নয়ই, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘোল দুধের তুলনায় বেশি উপকারী। এতে লাইভ কালচার প্রোবায়োটিকস বা অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী ব্যাকটেরিয়ার প্রাকৃতিক জোগান থাকে ভরপুর। এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে সমষ্টিগতভাবে বলা হয় মাইক্রোবায়োম যা আমাদের সুস্থ পরিপাকতন্ত্র, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম এবং দেহের পুষ্টির পরিপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষায় অতুলনীয়।

এক কাপ ঘোলে প্রায় আট গ্রাম প্রয়োজনীয় প্রোটিন থাকে। আর ঘোলের ব্যাকটেরিয়া প্রধান দুগ্ধজাত প্রোটিন তথা ক্যাসেইনকে ঘনীভূত করে ফেলে বলে কার্যকরীভাবে তা দেহে শোষিত হয়। ১ কাপ ঘোলে দৈনিক চাহিদার ২২ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ২৯ শতাংশ রিবোফ্লাবিন ও ২২ শতাংশ ভিটামিন বি১২ থাকে। অথচ মাখন তুলে নেওয়ায় ঘোলে দুধের তুলনায় অর্ধেকের কম চর্বি থাকে। এতে ঘোল যেমন সুপাচ্য হয়, তেমনি যাঁদের চর্বি খেতে নিষেধ, যেমন হৃদ্‌রোগ বা অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরাও নিশ্চিন্তে ঘোল পান করতে পারেন। এতে অবস্থিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক এনজাইমের প্রদাহরোধী ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টরূপে কার্যকর ভূমিকা থাকার ব্যাপারেও বহু গবেষণালব্ধ প্রমাণ পাওয়া গেছে।

টক মিষ্টি দইয়ের পুষ্টিগুণ উপকারিতাঃ

পুষ্টিবিদদের মতে, টক ও মিষ্টি দইয়ের পুষ্টিগুণ একই। চিনির কারণে মিষ্টি দই না খাওয়া ভালো। চিনি শরীরের অনেক ক্ষতি করে। ডায়াবেটিকস ও হৃদরোগ রোগীদের জন্য মিষ্টি দই ক্ষতিকর। ক্যান্সার রোগীদের জন্য মিষ্টি দই খাওয়া ঠিক না, কারণ চিনি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি করে ।

দই প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। এটি শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সক্ষম। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে টক দই অনেক উপকারী। যাদের দুধ হজম হয় না তারা নিয়মিত দই খেতে পারেন। দই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবায়োটিক যা পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে। দইয়ে এক প্রকার ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া থাকে যা আমাদের হজমের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি। যা হাড় মজবুত করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। টক দইয়ের সঙ্গে ফলমূল, খেজুর, স্যালাড ও এক চিমটি গোল মরিচ মিশিয়ে খেলে স্বাদ আরো বেড়ে যায়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!