সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী গোলাম দস্তগীর গাজীর রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় অভিযানের কথা স্বীকার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারনামীয় আসামি ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে এ অভিযান চালানো হয়েছে বলে বাহিনীর পক্ষ দাবি করা হয়েছে। ডিবি সদস্যরা ওই বাসা থেকে কোনো মালপত্র নেয়নি বলে তাদের দাবি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক রোববার রাতে বলেন, অভিযান সম্পর্কে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। ডিবি পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। অস্ত্র উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারের জন্য ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
৪, সিদ্ধেশ্বরী লেনে গাজীর বাসায় গিয়ে নিরাপত্তাকর্মী আবুল মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, শনিবার রাত ২টার দিকে বাসার পেছনের ফটকের সামনে কয়েকজন ডাকাডাকি শুরু করেন। তিনি এগিয়ে গেলে তারা পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে ফটক খুলে দিতে বলেন। ভয়ে তিনিসহ দু’জন নিরাপত্তাকর্মী ফটক না খুলে দেয়াল টপকে পাশের একটি বাড়িতে চলে যান। পরে তারা ওই বাড়ির জানালার কাছে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। ডিবি পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের একজন দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে একটি রড দিয়ে তালা ও গ্রিল ভাঙেন। পরে দু’জনকে ফটকে রেখে অন্যরা বাসার ভেতরে ঢোকেন। তারা ভোর ৫টার দিকে বেরিয়ে যান। তিন ঘণ্টার মতো তারা বাসায় ছিলেন। পরে ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন- সব তছনছ। জিনিসপত্র ছড়ানা ছিটানো অবস্থায় খাট ও মেঝেতে পড়ে আছে। আলমারির দরজাগুলো ভাঙা।
পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পরও কেন দরজা খোলেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল মজুমদার বলেন, এখন বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ-র্যাব পরিচয়ে ডাকাতি হচ্ছে। তাই আমাদের সন্দেহ ছিল- তারা সত্যিকারের পুলিশ কিনা। এর আগে আগস্ট মাসের ১০ বা ১১ তারিখ দুপুরে ১০-১২ জন গাজীর বাসায় আসে। তারা জোরপূর্বক ভেতরে ঢুকে পড়ে। পরে ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে দুই গৃহকর্মী দরজা খুলছিল না। এর পর দরজা ভেঙে বাসার ভেতর ঢুকে অনেক দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় কারা জড়িত, আমরা জানি না।
শনিবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাসার পাঁচটি রুমের সব জিনিসপত্র এলোমেলো। জিনিসপত্র রাখার সব বাক্স খালি। পাশের বাসা থেকে একজন দেখেছেন যে, যাওয়ার সময় একাধিক ব্যাগ ও কার্টন নিয়ে গেছে।
গাজী গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোলাম দস্তগীরের বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে রাতেই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা রমনা থানায় গিয়েছিলেন। তখন তাঁকে থানা থেকে বলা হয়েছিল, ওই বাসায় ডিবি অভিযানে গেছে।
স্থানীয় লোকজন ও বাসার নিরাপত্তাকর্মী জানান, রাত ২টার দিকে তিনটি মাইক্রোবাস এসে বাসার সামনে থামে। এসব গাড়ি থেকে ১৫-২০ জন নামেন। দু’জনের গায়ে পুলিশের পোশাক ও কয়েকজনের গায়ে ডিবির জ্যাকেট ছিল। অন্যরা সাদা পোশাকে ছিলেন। তারা নিরাপত্তাকর্মীর কাছে নিজেদের ডিবি সদস্য পরিচয় দিয়ে জানান, অভিযানে এসেছেন। বাসায় তল্লাশি চালাবেন। পরে তারা বাসায় ঢুকে সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলেন।
অভিযানের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথমে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ডিবির কোনো দল সেখানে অভিযানে যায়নি। এর পর রাতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ওই বাসায় অভিযানে গিয়েছিল ডিবি।
পরে এ বিষয়ে উপকমিশনার তালেবুর রহমান একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘ডিবির নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে একটি টিম আইন ও বিধি অনুসরণপূর্বক গোলাম দস্তগীরের বাসায় তল্লাশি চালায়। পুলিশের উপস্থিতি * টের পেয়ে বাসার দারোয়ান পালিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় থানা-পুলিশের সহায়তায় বাসায় তল্লাশি অভিযান সমাপ্ত করে ডিবির টিম ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অংশ হিসেবে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়।’
ডিবির ওই তল্লাশি অভিযান সম্পর্কে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির অবকাশ নেই উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ভবিষ্যতে ডিবির যে কোনো অভিযানের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধিকতর বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।’
গত ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগর থেকে গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার কিশোর রোমান মিয়া হত্যা মামলার আসামি তিনি। ওই মামলায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন (রূপগঞ্জ) থেকে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২৫ আগস্ট রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় তাঁর মালিকানাধীন গাজী টায়ার্স কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে পুরো কারখানা ভস্মীভূত হয়ে যায়।
এর পর লুটপাট করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ১৮২ জন। তারা আগুনে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাদের কোনো দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি। গাজীর দুই ছেলেই দেশের বাইরে। তাঁর স্ত্রী আত্মগোপনে।
খুলনা গেজেট/এইচ