অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এছাড়াও গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে অন্তত ৩০টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৯ জন। আহত হয়েছেন ২০ জন।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন অন্তত ৭৯২ জন। আহত হয়েছেন ৭৬৫ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে গত বছর। এসব ঘটনায় মারা গেছেন ১৭৯ জন। আহত হয়েছেন ৮৮ জন।
গত বছরের মতো গণপিটুনির ঘটনা বেশি ঘটেছে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে। এ দুই বছরে গণপিটুনিতে ২৩২ জন নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে ৩ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের এওচিয়া এলাকায় মাইকে ‘ডাকাত পড়ার’ ঘোষণা দিয়ে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে দলবদ্ধভাবে গুলশানের একটি বাসায় ঢুকে ‘তল্লাশি’র নামে জিনিসপত্র তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
এইচআরএসএস বলছে, এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডাকাতির ঘটনায় শরীয়তপুরে সাতজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এতে পাঁচজন মারা যান। এর এক দিন আগে রাজধানীর উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এসব ঘটনার বাইরে বগুড়া, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, টঙ্গী, রাজশাহী ও বরিশালেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে।
দেশে এ ধরনের সহিংসতা বৃদ্ধির পেছনে ছয় ধরনের কারণের কথা বলেছেন এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কেউ কেউ রাজনৈতিক ক্ষোভের কারণে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে গণপিটুনির ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষত পুলিশ ও র্যাব এখনো পুরোপুরি কার্যকর নয়। আবার চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে ক্ষোভের কারণে অনেকে সন্দেহ করে গণপিটুনির ঘটনা ঘটাচ্ছেন।
ইজাজুল ইসলাম বলেন, গণপিটুনির ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির নজির তেমন নেই। তাই অনেকেই আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া স্বার্থান্বেষী কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অরাজকতা তৈরির চেষ্টা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতার অভাবে রয়েছে। এসব কারণে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ বছরের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টিএ