যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে কিছু আসে-যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, গণতন্ত্র সম্মেলনে কোথায় কাকে দাওয়াত দিল আর না দিল, তার পরোয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেন না।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হাজী মোকবুল হোসেন কলেজ মাঠে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণতন্ত্র সম্মেলনে কোথায় কাকে দাওয়াত দিল আর না দিল, তার পরোয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেন না। আমার দেশে গণতন্ত্র ঠিক মতো চালাচ্ছেন কি না, আমার দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হচ্ছে কি না, দেশের জনগণ গণতন্ত্রের কথা বলতে পারছে কি না, কথা বলার স্বাধীনতা আছে কি না, তারা হেসে খেলে শান্তিতে আছে কি না, সেটাই আমার গণতন্ত্র। কে আমন্ত্রণ করলো, কার কোথায় সম্মেলন সেটা নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আয়োজিত গণতন্ত্রের বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন আগামী ২৯ ও ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। গতবারের মতো এবারের সম্মেলনও হবে ভার্চুয়ালি। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি। সম্প্রতি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলে বলেছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কর্মপরিকল্পনা দেয়া হয়নি, এ জন্য আমন্ত্রণ পায়নি এ দেশ।
শান্তি সমাবেশে বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি ভারতকে তো আমাদের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে। এখন আমেরিকা। কত জায়গায় গেলেন, কত তদবির করলেন, নিষেধাজ্ঞার জন্য। এলো কি নিষেধাজ্ঞা?
‘ডোনাল্ড লু এলো, আলাপ করল সরকারের সঙ্গে, কথাবার্তা বলল সরকারের সঙ্গে। তারপরে এলো ডিরেক্ট শোলে। বিএনপির সঙ্গে কি বৈঠক হয়েছে? কত চেষ্টা, দিনরাত পড়েছিল মার্কিন দূতাবাসে, যদি একটা সাক্ষাৎ মেলে। সাক্ষাৎ কি হয়েছে? ওখানেই মন খারাপ।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এটাই খবর। এটাতেই মন খারাপ। এখন আমেরিকা নেই। বিদেশি বন্ধুরাও নেই। দেশেও পাবলিক নেই। বিএনপি বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে। তাহলে উপায়টা কিসে?’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পালাতে জানে না। আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। দেশের মানুষের অন্তরে অন্তরে, হৃদয়ে হৃদয়ে। এই আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্ন করা বা পতন ঘটানো সম্ভব নয় ফখরুল সাহেব।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থাকবে। পালিয়েছেন আপনারা, হয়তো পালাবেনও আপনারা। আমরা পালাতে জানি না। আমাদের এই দেশেতে জন্ম, এই দেশেতে থাকব; মানুষের মাঝে, মাটির মাঝে।’
এই বিশ্ব সঙ্কটেও সরকার বেশি দামে জ্বালানি ও খাদ্যশস্য কিনছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কিন্তু আপনাদের (জনগণ) দিচ্ছে কম পয়সায়। ভর্তুকি দিয়ে চালাচ্ছে, মানুষের যেন কষ্ট না হয়। আর বিএনপি হচ্ছে খাম্বা আর খাম্বা। কোথাও বিদ্যুৎ নেই আছে শুধু খাম্বা।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারেক জিয়া তো খাম্বা ব্যাপারী। তার কাজই ছিল খাম্বার ব্যবসা করা। লুটপাট করা। হাওয়া ভবনের আরেক নাম খাওয়া ভবন। সেই লুটপাটের ভবন শেখ হাসিনার ছেলে মেয়েরা করে নাই। প্রধানমন্ত্রীর পরিবার ব্যবসা করে না। সাধারণ জীবনযাপন করে। সৎ জীবনযাপন করে।’
‘এখন বিএনপির মুখে আবার খই ফুটেছে। স্লো মোশান, গণঅভ্যুত্থান আর গণজাগরণ। বিএনপির আন্দোলনের নদীতে এখন জোয়ার নাই। গণজোয়ার আর আসে না। এই বছর না, আগামী বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর? এই বছর কি পারবে? তাহলে কি নির্বাচনের পর? আগামী বছর আবার আন্দোলন করবে। শর্ট মার্চ থেকে আবার নাকি লং মার্চে যাবে। সবই ভুয়া। বিএনপি হচ্ছে ভুয়া। কই আন্দোলন?’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতির বিষফোঁড়া। এদের কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, জনগণের ভাগ্য নিরাপদ নয়।’
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিছু কিছু লোক দলের নামে কিছু অপকর্ম করছে। মানুষ ক্ষমতাসীন দলকে কিছু বলবে না। এখন ভয় পাবে। কিন্তু এবার ভোট হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। যাদের শাস্তি দিচ্ছেন তারা তখন আপনাদের প্রার্থীকে শাস্তি দিয়ে দেবে। এসব অপকর্ম সংশোধন করেন।
‘নেতাদের বলি, যার যার ক্যাডার সংশোধন করেন। এরা এক সময় দলের জন্য লায়াবেলিটিস হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কর্মীর অভাব নেই, নেতার অভাব নেই। আমি ভালো লোক চাই। শেখ হাসিনা খারাপ লোক চান না। ভালো লোক দিয়ে কমিটি করুন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাদেক খান প্রমুখ।