খুলনা, বাংলাদেশ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি মঙ্গলবার
বিদেশী কূটনীতিকদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণঅভ্যুত্থানে মৃত্যু তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা নেওয়া হবে

গেজেট ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত সব মৃত্যু ও সহিংসতার স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার। এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা নেওয়া হবে।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের  পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. তৌহিদ হোসেন এ কথা বলেন। ব্রিফিংয়ে চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন বিদেশি কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কূটনীতিকদের কাছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার’ পটভূমি তুলে ধরে বলেন, সাহসী ছাত্রদের নেতৃত্বে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। তবে এর জন্য জাতিকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।

কূটনীতিকদের তৌহিদ হোসেন বলেন, সংবিধান মেনেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারের লক্ষ্য ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। জাতীয়ভাবে বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত সব মৃত্যু ও সহিংসতার স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার। এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা নেওয়া হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করেন, তাতে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন হবে কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটা খুবই অনুমানমূলক প্রশ্ন। একজন যদি কোনো এক দেশে গিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? তার তো কোনো কারণ নেই। দ্বিপক্ষীয় বিষয় কিন্তু অনেক বড় বিষয়। এটা স্বার্থের সম্পর্ক। বন্ধুত্বটা কিন্তু স্বার্থের সম্পর্ক। দুই পক্ষের স্বার্থ আছে, ভারতের স্বার্থ আছে; ভারতে আমাদের স্বার্থ আছে। কাজেই আমরা সেই স্বার্থকে অনুসরণ করব। আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা থাকতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকার কোন পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে, তা রাষ্ট্রদূতদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের উদ্দেশ্য বলেছি। একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা যারা এনেছে, তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। তাদের চাওয়া কোনো বৈষম্য থাকবে না। এই সরকার এ উদ্দেশ্যে কাজ করছে।’

এ সভায় সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘তারা এগিয়ে এসেছে। আমরা বলেছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়ভাবে যুক্ত হতে চাই। সব ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ সবার সঙ্গে। রোহিঙ্গা ইস্যু, বিনিয়োগের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন এসেছে। আমরা বলেছি, তারা যেন হতাশ না হয়। এত বড় একটা পরিবর্তন হয়েছে, কিছু তো সময় লাগতে পারে।’

ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকেরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের চ্যান্সারি, রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে সিকিউরিটি নেই। এটা আমি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছি যে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে, যেহেতু পুলিশ রাস্তায় নামা শুরু করেছে।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একজন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুবকেরা এত বড় একটা কাজ করল। আগামীতে যেন যুবকদের মধ্য থেকে একটা নেতৃত্ব আসে। আমি বলেছি, দুজন ছাত্র কাউন্সিলে (উপদেষ্টা পরিষদ) আছে। তাদের অনেকের মানবাধিকার নিয়ে…। আমরা বলেছি, মানবাধিকার নিয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে কূটনীতিকেরা কোনো প্রশ্ন করেছেন কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন আসেনি। কাজেই এটা এখন আমরা বাদ দিই। নির্বাচনের বিষয়ে একটি শব্দও হয়নি। আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি বিষয়টা। এ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সময়ের ব্যাপারে বলছি না। ছাত্ররা কি পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য জীবন দিয়েছে? তাদের কিছু চাওয়া আছে। কিছু সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে। আমরা যেটুকু সময়ের প্রয়োজন পড়বে, ঠিক সেই সময়টুকু—বেশি থাকব না, কমও থাকব না। সংস্কারগুলো অন্তত পথে এনে দিয়ে যেতে হবে। সবকিছু কেউ করে দিয়ে যেতে পারবে না; ছাত্রদের যে চাওয়া, সেটা যেন পথে এনে দিয়ে যাওয়া যায়।’

বিদায়ী সরকারের পরিকল্পনায় থাকা বন্ধুদেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা আটকে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোনো কিছু থেকে সরে যাব, এমন নয়। যার সঙ্গে যে চুক্তি আছে বা অঙ্গীকার আছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা দ্বিপক্ষীয় ব্যাপারে সেগুলো কিন্তু যে অঙ্গীকার বাংলাদেশ করেছে, অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। যেখানে আমাদের মনে হয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে, সেখানে আমাদের স্বার্থ দেখা হবে।’

গতকাল রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘দেশের সবকিছু আমাদের ছাত্রদের কিংবা দেশের নিয়ন্ত্রণে নেই।’ এই মন্তব্য তিনি কেন করেছিলেন, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এ জন্য বলেছি, যে রকম নিরাপত্তা দিতে চাচ্ছি, সে রকম পারছি না।’

গত রোববার বাইরের কারও নিয়ন্ত্রণ আছে বলে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাইরের কারও নিয়ন্ত্রণ থাকার তো কোনো প্রশ্ন নেই। যে পরিষদ দায়িত্বে আছে, এই দায়িত্ব পালন করে সরে যাব। যে পরিষদ আছে, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, অন্য কারও জন্য নয়, বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা বিড করছে। আমি যা দেখেছি, কেউই অন্য কোনো দেশের জন্য বিড করছি না।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!