কালের বিবর্তনে প্লাস্টিকের ছোঁয়া লেগেছে খেজুর রস সংগ্রহেও। আমাদের ঐতিহ্যবাহী মাটির হাঁড়ির জায়গা দখল করে নিচ্ছে এবার প্লাস্টিকের বোতল।
মাটির হাঁড়িতে করেই খেজুরের রস সংগ্রহের চল আছে বাংলাদেশের সব এলাকায়, যা প্রকৃত অর্থেই স্বাস্থ্যসম্মত। চিকিৎসকরা বলছেন, মাটির হাঁড়িতে রস সংগ্রহ ছিল স্বাস্থ্যসম্মত। আর সে তুলনায় প্লাস্টিকের বোতল একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অপরদিকে রস আহরণকারীরা বলছেন, মাটির হাঁড়ির চাইতে প্লাস্টিকের বোতলে সুবিধা বেশি।
সম্প্রতি বাগেরহাটের ফয়লা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশের খেজুর গাছ থেকে চলছে রস আহরণ। গাছে গাছে ঝুলছে প্লাস্টিকের বোতল। খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
বাগেরহাট এর চুলকাঠি-ফয়লা-ভাগা ও রামপাল এর বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। এসব এলাকার মাটির হাঁড়ির পাশাপাশি দেখা মিলছে প্লাস্টিক এর বোতল।
রস সংগ্রহের সময় ফয়লা এলাকার গাছি বাসুদেব বলেন, মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করলে পাখি মুখ দিতে পারে না। ময়লা পড়ে না। প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে বড় গাছে ওঠা-নামা করা সহজ। আর ছোট গাছে কুকুর-বিড়ালের ‘জিহ্বা’ থেকে রস রক্ষা করা যায়। এছাড়া মাটির হাঁড়ির দামও বেশি। প্লাস্টিকের বোতলের দাম কম।
চুলকাঠি এলাকার সুবল নামের আরেকজন জানান, প্রতিদিন বিকেলে গাছ কেটে তাতে বোতল লাগানো হয়। গাছের রসের ওপর নির্ভর করে বোতলের আকার। সারা রাত টপ টপ করে রস পড়ে। সকালে সূর্য ওঠার আগেই, কিংবা বোতল রসে ভরে গেলে নামিয়ে আনতে হয়। রাস্তার পাশে রস চুরিও হয়। একটা মাটির ঠিলার দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা। অন্যদিকে প্লাস্টিক এর বোতল ২/৩ টাকায় পাওয়া যায়।
ঘনশ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ সাইফুল ইসলাম। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, মাটির হাঁড়িতে খেজুর গাছ থেকে রাতভর রস পড়তে থাকতো। সেই রস ভোরে সূর্য উঠার আগেই গাছিরা এক জায়গায় জড়ো করতেন। কিন্তু এখন মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন গাছিরা। এটা আমার কাছে স্বাস্থ্যসম্মত মনে হয় না।
বাগেরহাট জেলার কাটাখালি এলাকার প্রণব দেবনাথ বলেন, প্লাস্টিকের বোতলের অনেক সুবিধা, আবার অসুবিধাও আছে। মাটির হাঁড়িতে রস সংগ্রহ করলে সে রস থাকতো একদম টাটকা। আর বোতলে বেশি সময় রস রাখলে গন্ধ হয়ে যায়। রং ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
প্লাস্টিকের বোতলে রস আহরণের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে কথা হয় রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ গৌরব কুমার সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বোতলের চাইতে মাটির হাঁড়ির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা বেশি। মাটির হাঁড়ি বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ শোষণ করতে পারে এবং অনেক জীবাণু ধ্বংস করতে পারে, যা প্লাস্টিকের বোতল পারে না। প্লাস্টিকের বোতলে বদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে খেজুরের রস থাকলে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে কিছু ক্ষতিকর গ্যাস এবং যৌগ তৈরি হয়, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।