খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের নিয়োগের তোড়জোড়

বিশেষ প্রতিনিধি

বিতর্কের মধ্য খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর তোড়জোড় চলছে। এই নিয়োগ বন্ধে সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। ভাড়া করা ভবনে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। এসব সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়ে তাদের গুরুত্ব নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। ২০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ৩৩৪ জন খুকৃবিতে কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে, অতীতে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে ভিসি-রেজিস্ট্রারের কাছের লোকজনের সংখ্যাই বেশি।

নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে একটি তদন্ত সম্পন্নও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তদন্ত প্রতিবেদনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ঠেকাতে নীতিমালা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু এসব কিছু আমলে না নিয়ে বন্ধ হয়ে থাকা নিয়োগ কার্যক্রম ফের চালু করেছে প্রশাসন।

গত বছরের ৪ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ বহাল আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত কমিটির যে সুপারিশ জমা হয়েছে সে সাপেক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার নিয়োগ স্থগিত থাকবে।

এরপরও ভিসি ড. মো. শহীদুর রহমান খান নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। অচিরেই মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করা হবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার শাহজাহানের চাকরি স্থায়ী করতে গোপনে একটি নিয়োগ বোর্ড গঠনের তোড়জোড় চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এই নিয়োগ বন্ধে সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে ‘অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর’ উল্লেখ করে দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৩৩৪ জন, অথচ শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ২০০ জন।

গত সাড়ে ৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ১ ইঞ্চি জায়গার সংকুলান না করে ভিসি এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মিলে ৩৩৪ জন জনবল নিয়োগ দিয়েছেন (শিক্ষক-৭৩, কর্মকর্তা-৩০, কর্মচারী-২৩১)।

সম্প্রতি ভিসি’র বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠলেও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিজেও নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করেছেন। খুকৃবিতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এর আত্মীয় ও এলাকাবাসী পরিচয়ে অনেকে চাকরি পেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, ভাতিজি জান্নাতুল নাঈম (প্রশাসনিক কর্মকর্তা), চাচাত ভাই কালাম (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) দূরসম্পর্কের নাতি কামরুল হাসান (অফিস সহায়ক), চাচাত ভাই আল মামুন (ল্যাব এটেনডেন্ট), নিকটাত্মীয় হান্নান আকন্দ (ফটোকপি মেশিন অপারেটর), নিকট আত্মীয় আবদুল মতিন (কম্পিউটার অপারেটর), এলাকাবাসী জাহাঙ্গীর আলম (অফিস সহায়ক), এলাকাবাসী শহিদুল ইসলাম (উন্নয়ন কর্মকর্তা)।

ইউজিসি’র তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, অঞ্চলপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ না দেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদনের আলোকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে নতুন সচিব দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাই ইউজিসি’র প্রতিবেদনটি নিয়ে এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় নতুন কোনো নির্দেশনা জারি করতে পারেনি।

কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট বরাবর আরও অভিযোগ করেছেন, মার্চ মাসের ৩ তারিখ থেকে আবারও নতুন করে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের বোর্ড বসানো হচ্ছে, কারণ নতুন নিয়োগ মানেই টাকার খেলা! অভিযোগে আরও বলা হয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করতে হলে অবশ্যই কৃষিবিদ হতে হবে। এই খবরে কর্মকর্তারা হতাশ। কারণ রেজিস্ট্রার একটি প্রশাসনিক পদ, যে কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থী এই পদে আবেদনের অধিকার রাখে। বাংলাদেশের কোনো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত নীতিমালায় প্রার্থীকে কৃষিবিদ হতে হবে এই নিয়ম নেই। কারণ কৃষি শিক্ষার ন্যূনতম জ্ঞান ছাড়া যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করা যায়। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার শাহজাহান নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে এই নীতিমালা পাস করিয়েছেন। যা ইউজিসি’র তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে। মাজহারুল আনোয়ার একজন কৃষিবিদ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেতে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের অভিজ্ঞতা ঘাটতি থাকায় খুকৃবির নীতিমালায় সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্বীকৃত যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা গ্রহণযোগ্য হবে বাক্যটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে যেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তার পূর্ববর্তী বেসরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা গনণায় আনতে পারে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!