খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ১০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বাড়ছে উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি, সন্ধ্যায় শপথ
  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ১৯১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

খুলনায় ১৭ বছর ধরে মিলছে ‘এক টাকায় ইফতার’ (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ বছর ধরে এক টাকায় ইফতার বিক্রি করছেন খুলনার ইকবাল মোল্লা। খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা বাজারে নিজ দোকানেই বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিটি বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ ও ঝালের চপ এক টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে সেখানে। তবে শুরুর দিকে ইকবাল একা বিক্রি করলেও বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে মহতী এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে রাখতে তাদের এই উদ্যোগ। রমজান মাস জুড়ে চলবে তাদের এই কার্যক্রম।

হোটেল ব্যবসায়ী মো. ইকবাল মোল্লা বলেন, আজ ১৭ বছর ধরে সেবামূলক কাজ করছি। বাইরে থেকে সহযোগিতা করেন অনেকে। এখানে চপ, বেগুনি, কাচা ঝালের চপ, পেঁয়াজু ও ছোলা রয়েছে। ছোলা বাদে সব কিছু এক টাকায় একটি করে বিক্রি করা হয়। ১৭ বছর আগেও প্রতি পিচ এক টাকা করে বিক্রি করেছি, এখনো সেই দামেই বিক্রি করছি। বাজারে অন্যরা যে পণ্য বিক্রি করছে, সেটা আমরা করছি। কিন্তু তাদের পণ্যের চেয়ে আমাদেরটা ভালো এবং দামে কম। এখানে আমি ভালো জিনিস আনার চেষ্টা করি এবং যে ব্যক্তি আমাকে জিনিস দিয়ে সহযোগিতা করে তিনিও ভালো জিনিসটাই দেন।

তিনি আরও বলেন, এখানে নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ আছে, যারা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ঠিক মতো ইফতার কিনে খেতে পারেন না। যাতে খেটে খাওয়া মানুষগুলো স্বল্প মূল্যে ইফতার কিনে খেতে পারেন এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে সে জন্য আমাদের এই উদ্যোগ। এতে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের প্রতিদিন ৭ হাজার মাল তৈরির টার্গেট। অনেক সময় বেশিও লেগে যায়। রমজান জুড়ে চলবে আমাদের এই আয়োজন। আগে আমি একাই এই আয়োজন করতাম। এখন বাজারে সব কিছুর দাম বেশি, এ জন্য এবার স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও আমাকে সহযোগিতা করছেন। শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই নয়, সহযোগিতা করছে দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা মানুষও।

ইকবাল মোল্লা বলেন, আমি সকাল ৬টা থেকে কাজ শুরু করি। এরপর অন্যরা আমাকে সহযোগিতা করতে আসেন। যতক্ষণ মালামাল থাকে, ততক্ষণ কাজ চলতে থাকে।

ইফতার তৈরিতে সহযোগিতাকারী শেখ রুবেল বলেন, স্থানীয় একটি স্কুলে কাজ করি। কাজ শেষ করে এখানে এসে সহযোগিতা করি। সেবামূলক এই কাজটি করতে আমার খুব ভালো লাগে।

স্থানীয়রা জানান, নগরীর মহেশ্বরপাশা বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী ইকবাল মোল্লা গত ১৭ বছর ধরে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করে আসছেন। প্রতিবছর তিনি প্রতিটি বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ ও ঝালের চপ এক টাকা করে বিক্রি করেন। তবে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইফতার সামগ্রী তৈরিতে ব্যয় বেড়েছে। ফলে এবারের রোজায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখতে ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় ভর্তুকি দিয়ে এক টাকায় ইফতার সামগ্রী বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়। চাহিদার বিপরীতে তাৎক্ষণিকভাবে আরও ইফতার সামগ্রী তৈরি করা হয়।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সব শ্রেণির মানুষ যাতে ইফতারি কিনতে পারে সে জন্য আমাদের এই সহযোগিতা। স্থানীয় দোকানি ও পাশের মানুষ ইকবাল মোল্লাকে ইফতার সামগ্রী বিক্রিতে সহযোগিতা করেন। স্থানীয় শিবুপদ দে, মনিরুল ইসলাম টুটুল, আব্দুল খালেক, গোবিন্দ কুমার দাস, পর্বত, হাফিজুর, নিরঞ্জন, হায়দার, রায়হানসহ ১২ জন প্রতিদিন রান্না থেকে বিক্রি পর্যন্ত সহযোগিতা করেন। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এখান থেকে ইফতার সামগ্রী নিয়ে যায়।

এই ইফতার সামগ্রী বিক্রিতে সহযোগিতাকারী আবিদ রহমান খান বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। কম মূল্যে বিক্রির কারণ হচ্ছে যাতে সব শ্রেণির মানুষ ইফতার করতে পারে। যাতে তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ইফতারি কিনে খেতে পারে। ইফতার সামগ্রিক বিক্রিতে লাভ তো হয় না, লোকসানে বিক্রি করা হয়, ভর্তুকি দিয়ে। আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি যাতে সবাই ইফতারি করতে পারে। এখানে ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, রিকশাচালকসহ নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আসেন। তাদের বাজেটের মধ্যেই এটা পড়ে।

মহেশ্বরপাশা কালিবাড়ী বাজারের বাসিন্দা মিল্টন শরীফ বলেন, আমি এখান থেকে ইফতার সামগ্রী কিনি। স্বল্প মূল্যে চাহিদা মতো ইফতার কেনা যায়। তাদের এই উদ্যোগটা ইতিহাস রচনা করেছে। খুবই ভালো উদ্যোগ এটা। এতে সব শ্রেণি পেশার মানুষ ইফতার কিনতে পারবে। এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

আরেক ক্রেতা সাইফুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আমি এখান থেকে ইফতার সামগ্রী নিয়ে যায়। এখানে দামেও কম, আর বাড়িতে বাড়তি ঝামেলাও হয় না।

তিনি বলেন, বর্তমান সব কিছুরই দাম বেশি। বাজারের অন্য দোকানে যে চপ, বেগুনি ৩ থেকে ৫ টাকা সেটা এখানে এক টাকায় মিলছে। এটি একটি দারুণ উদ্যোগ।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!