চালের মূল্য বৃদ্ধি রোধে সরকার গেল মঙ্গলবার মিল গেটে সরু ও মাঝারি মানের মিনিকেট চালের দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুলনার চালকল মালিকদের মধ্যে তা নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। বুধবার থেকে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ চালকল মালিক নতুন দামে চাল সরবরাহ করেনি। জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সরকার চালের দাম নির্ধারণ করলেও বেশি দামে ধান কেনার অজুহাত রয়েছে চালকল মালিকদের।
খুলনার চালকল মালিকদের অভিযোগ, মিল পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করার আগে ধানের দাম নির্ধারণ করা দরকার। যে ধান আমরা ৮৫০ টাকা বস্তা কিনতাম এখন তা ১২শ টাকা বস্তা কিনতে হচ্ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি করলে আমরা কিছুটা লোকসানের মুখোমুখি হবো।
খুলনার আরাফাত রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী আলাউদ্দীন হোসেন জানান, সরকারের নতুন দাম নির্ধারণের পর এখনো কোন চাল সরবরাহ করা হয়নি। তবে নতুন দামে চাল বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।
সাদিয়া রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী আমিনুর ইসলাম বলেন, ‘গেল এক সপ্তাহ মাঝারি মানের বিআর ২৮ ধানের মিনিকেট চাল বিক্রি করেছেন ২৩০০-২৫০০ টাকা বস্তা। এখন যদি তা ২২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয় তবে লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে। কারণ বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাও আবার চাহিদার তুলনায় যোগান কম।’
পাইকারী চাল ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘মিল পর্যায়ে সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে সেই দামে আমাদের এখনো চাল কেনা হয়নি। অপেক্ষা করছি মিল মালিকরা সরকার নির্ধারিত দাম অনুসরণ করে কি না। তারা দাম বাড়ালে আমারাও বাড়াতে বাধ্য হই।’
ক্রেতাদের অভিযোগ, মিল মালিকদের সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবেই চালের দাম বাড়ায়। আর এর প্রভাব পড়ে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। সরকারকে শুধু দাম নির্ধারণ করে বসে থাকলে চলবে না। যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা মিল মালিকদের মানতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
ক্রেতারা মনে করেন, হঠাৎ করে চালের দাম বাড়লে বেশি বিপাকে পড়েন নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শ্রমের দাম না বাড়লেও চালের দাম বাড়ায় তাদের নাভিশ্বাস উঠছে যায়।
উল্লেখ্য, ২৯ সেপ্টেম্বর সরকার মাঝারি ও সরু চালের পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চালকল মালিকদের বৈঠকে এ দাম নির্ধারণ হয়। নতুন দর অনুযায়ী, প্রতি কেজি সরু মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা ও প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৫৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হবে। মাঝারি মানের চাল প্রতিকেজি ৪৫ টাকা ও বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।
বুধবার থেকে দেশের সব চালকল মালিককে নতুন এই দামে চাল বিক্রি করতে বলা হয়েছে। কেউ তা না করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাা নেওয়া হবে। চাল ব্যবসায়ীরা এই দামে চাল বিক্রি না করলে আগামী ১০ দিনের মধ্যে সরু চাল আমদানি করা হবে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।
বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থাানে চালকলগুলোতে নতুন দামে বিক্রি নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট ও খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালাবেন। তবে এখন মোটা চাল তেমন অবশিষ্ট নেই, এই যুক্তি তুলে ধরে এর কোনো মিলগেট দাম নির্ধারণ করা হয়নি।
খুলনা গেজেট/এনএম