খুলনার গল্লামারীতে সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বাচ্চা প্রসব এবং পাচার সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ক্লিনিক মালিকসহ পাচার চক্রের ১০ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-৬।
জানা যায়, বেশ কিছু দিন পূর্বে র্যাব-৬,খুলনার একটি আভিযানিক দল তাদের গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারে যে, কেএমপি খুলনা জেলার লবনচরা থানাধীন গল্লামারী এলাকায় সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিছু অনৈতিক ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। মানব সেবার মত প্রশংসনীয় কাজে নিয়োজিত থেকে তাদের ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বাচ্চা প্রসব, অবৈধ গর্ভপাত ও শিশু পাচারসহ বিভিন্ন ঘৃন্যতম কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলো এবং অবৈধ গর্ভপাত ও শিশু বিক্রির মতো নিকৃষ্ট কাজে রোগীদের উৎসাহিত করতো।
র্যাব-৬ এর নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, জৈনক মহিলা অবৈধ গর্ভস্থ হওয়ায় তার সন্তান ভূমিষ্ট করা এবং পরবর্তিতে বিক্রি করার মতো ঘৃন কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে সে টিউমার অপারেশনের নামে ক্লিনিকে ভর্তি হয় এবং সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর তাকে অসাধূ ব্যক্তিদের কাছে বিক্রয়ের জন্য পরিকল্পনা করে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন ক্লিনিক ও তার স্বত্যাধিকারী সরাসরি সহায়তা প্রদান ও জড়িত বলে জানা যায় । ওই ক্লিনিকে প্রায়শই অবৈধ বাচ্চা ক্রয় বিক্রয় ছাড়াও নানাবিধ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো বলে জানা যায়। পাশাপাশি মেয়াদ উত্তীর্ন রেজিস্টেশনকৃত সুন্দরবন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কিংবা প্রশিক্ষিত নার্স কারো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। বর্ণিত ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কথিত ডাক্তার মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট হয়েও রোগী দেখা থেকে শুরু করে সিজারিয়ান অপারেশনও পরিচালনা করতো। ক্লিনিকে ব্যবহৃত মেয়াদ উত্তীর্ন ঔষধ এবং ব্যবহারের অযোগ্য সরঞ্জামাদি ক্লিনিকের পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বসবাসের অযোগ্য এ পরিবেশে ক্লিনিকের মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট নিজেই বিভিন্ন সময় নানাবিধ সিজারিয়ান অপারেশনসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে।
এমতাবস্থায় র্যাব-৬, খুলনা কর্তৃক কঠোর গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে বর্নিত সকল ঘৃন্যতম অপকর্মের তথ্য প্রমানাদি সংগ্রহ করতঃ সুন্দরবন ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করে এবং নবজাতক সন্তান বিক্রি করার সময় ১ জন নবজাতক (ভিকটিম) উদ্ধার করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়।
১৬ জুলাই সন্ধা ৭টার দিকে র্যাবের একটি দল ওই স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বাচ্চা প্রসব এবং পাচার সংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রধান আসামী তুষার কান্তি মন্ডল(৪৫), পিতা- মৃত গুরুদাস মন্ডল, বেবী চন্দন রায়(৩২), পিতা- রমেশ চন্দ্র রায়, স্বামী- তুষার কান্দি মন্ডল,উভয় সাং- রামপাল, থানা- রামপাল, জেলা- বাগেরহাট, বর্তমান সাং- রংধনু আবাসিক এলাকা, থানা- লবনচরা, জেলা-খুলনা, মোঃ সোহরাব হাওলাদার(৬৫), পিতা-মৃত আলী আক্কাস হাওলাদার, তামান্না তমা(২৬), পিতা- মোঃ সোহরাব হাওলাদার, উভয় সাং-জিওধরা, থানা- মোড়লগঞ্জ, জেলা- বাগেরহাট, মোঃ মজুনুর রহমান খাঁন লালু (৪৫), পিতা- মৃত আঃ খালেক, মোঃ মহিদুল ইসলাম(২৭), পিতা- মোঃ শাহজাহান সানা, উভয় সাং- ফাতেমাবাদ, থানা- লচরনচড়া, জেলা- খুলনা, মোঃ শামীম হোসেন(১৮), পিতা- মোঃ শাহজাহান খান, সাং- জয়খালী, থানা- হরিণটানা, জেলা- খুলনা, মোছাঃ লাজলী খাতুন(৩০), স্বামী- মোঃ মজনুর রহমান লালু, পিতা- শওকত মোল্লা, সাং- গজেন্দ্রপুর, থানা- ডুমুরিয়া, জেলা- খুলনা, মোছাঃ লাকী আক্তার(৪৮), স্বামী- শওকত মোল্লা, সাং- গজেন্দ্রপুর, থানা- ডুমুরিয়া, জেলা- খুলনা, মোছাঃ হোসনেআরা বেগম(৪৫), স্বামী- মোঃ জাকির হোসেন, পিতা-মৃত লোকমান গাজী, সাং- ফাতেমাবাদ, থানা- লচরনচড়া, জেলা- খুলনাদেরকে গ্রেফতার করে।
এ সময় উপস্থিত সাক্ষিদের উপস্থিতিতে গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তুষার কান্তি মন্ডল ডাক্তার সেজে তার স্ত্রী বেবী চন্দন রায় এর সহযোগীতায় দীর্ঘদিন যাবত তারা ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বাচ্চা প্রসব, অবৈধ গর্ভপাত ও পাচারের মত জঘন্য অপরাধ করে আসছে। এছাড়াও তাদের নিকট থেকে বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিনামার ৩ (তিন)টি সাদা ১০০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়। এছাড়ও উল্লেখ্য ৯ জন আভিযুক্তের মধ্যে নারী ও পুরুষ বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয় ও পাচারের সাথে জড়িত বলে তারা র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের খুলনা জেলার লবনচরা থানায় হস্তান্তর করতঃ তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং মানব পাচার আইনে মামলা দায়েরের কার্যক্রম চলমান। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন এর সহায়তায় সুন্দরবন ক্লিনিক সিলগালা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সূত্র: প্রেস ব্রিফিং।
খুলনা গেজেট/ টি আই