খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

খুলনার শ্রম পরিচালকের অপসারণে ৭ দিনের আল্টিমেটাম, কার্যালয় ঘেরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক 

খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানের বিচার, শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে শ্রম অধিদপ্তরের সামনে ঘেরাও ও সমাবেশ করেছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে রূপসায় অবস্থিত খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কারখানা কমিটির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের অপসারণের দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন শ্রমিক নেতারা।

সমাবেশে খালিশপুর জুটমিল, দৌলতপুর জুটমিলসহ পাঁচটি পাটকলের শ্রমিকদের ২০১৫ সালের মজুরি কমিশনের এরিয়ারের টাকা, রাষ্ট্রীয় পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু, করোনাকালীন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধাদি প্রদান, ২০২০ সালের নতুন দুটি উৎসব বোনাসের সকল পাওনা প্রদানের দাবি জানানো হয়।

শ্রমিক নেতারা বলেন, ২০২০ সালের ২ জুলাই বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান একযোগে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করেন। তখন থেকেই আমরা পাটকল চালু, শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা প্রদান, পাটকল আধুনিকায়নের দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলি। আন্দোলনের শুরুতেই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিশেষ সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন দ্বারা আমাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এসেছে। খুলনা বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মো. মিজানুর রহমান তৎকালীন সরকার ও সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে শ্রমিক স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং এখনো শ্রমিক স্বার্থ পরিপন্থি ভূমিকা রেখে চলেছেন। রাষ্ট্রীয় মালিক আমাদের শ্রম শোষণ করেছেন, রক্ত চুষে নিয়েছেন।

শ্রমিক নেতারা আরও বলেন, আমাদের শ্রমের টাকা, আমাদের ঘাম ঝরা টাকা কোনোভাবেই আত্মসাৎ হতে দেব না। সমস্ত ষড়যন্ত্র, সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকব, আমাদের লড়াই চলবে অবিরাম। খালিশপুর জুটমিলসহ অন্যান্য পাঁচটি জুটমিলের শ্রমিকদের সমুদয় টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।

শ্রম পরিচালকের বিচার ও অপসারণের দাবি তুলে শ্রমিক নেতারা বলেন, পাটকল আন্দোলন চলাকালে আমরা আমাদের মিলগুলো চালু এবং বকেয়া বেতনের জন্য খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে গেলে তিনি আমাদের প্রত্যক্ষ হুমকি দেন। আমরা কীভাবে রাজপথে আন্দোলন করি তা তিনি দেখে নেবেন। রাজপথে আন্দোলন করলে আমাদের ওপর প্রশাসন দিয়ে হামলা চালাবেন, হাত-পা ভেঙে দেবেন, এমনকি গুলি করে মেরে ফেলবেন বলেও হুমকি প্রদান করেন। তিনি ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক শ্রমমন্ত্রীর একান্ত আস্থাভাজন কর্মকর্তা। এই পরিচালক দীর্ঘ ১৭ বছরে একাধারে খুলনায় থাকার কারণে তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের স্বৈরাচার পরিচালকে পরিণত হয়েছেন। কীভাবে তিনি এতো বছর খুলনায় থাকেন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে। সাবেক সরকারের ১৭ বছরে তিনি ১৫ জনকে ডিঙ্গিয়ে পরিচালক হন।

শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন, খুলনায় তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের উলটো দিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৬৭নং প্লট সাবেক শ্রমমন্ত্রীকে দিয়ে ২০১২ সালে ১ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। এখন তিনি সেই জায়গার ওপর ৯ তলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। তিনি কীভাবে বিশাল সম্পদের মালিক হলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা অবিলম্বে শ্রম পরিচালক মিজানুর রহমানের বিচার-অপসারণ এবং মিল চালু ও সকল বকেয়া প্রদানের জোর দাবি জানাচ্ছি। নতুবা দ্রুত গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এদিকে শ্রমিকদের কর্মসূচি চলাকালীন বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকনেতাদের এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এই মতবিনিময় সভায় কর্মকর্তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এবং ওপর মহলে অবহিত করব। তবে শ্রম পরিচালকের অপসারণের ব্যাপারে আমরা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারব না। এ কথা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের কানে পৌঁছালে তারা প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে শ্রম কর্মকর্তারা আবারও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। ওই সভায় শ্রমিকনেতাদের আশ্বস্ত করেন, আপনারা আমাদের সাত দিনের সময় দেন। তখন শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আগামী সাত দিনের ভেতর কোনো পদক্ষেপ না নিলে রাজপথে অগ্নিঝরা আন্দোলন শুরু করব।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও সিবিএ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন মনি এবং সঞ্চালনা করেন খালিশপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

বক্তৃতা দেন, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মোফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মোজাম্মেল হক খান, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলা সভাপতি কাজী দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, খুলনা-যশোর আঞ্চলিক বদলি কমিটির আহ্বায়ক মো. ইলিয়াস হোসেন, ক্রিসেন্ট জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি শামছুজ্জোহা ডিয়ার, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কারখানা কমিটির উপদেষ্টা মো. নূরুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা আবদুল হাকিম, শফিউদ্দীন আবদুল আজিজ, মফিজ ইময়া, আবুল খায়ের প্রমুখ।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!