খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

খুলনার রূপসা-ভৈরব বুড়িগঙ্গার পরিণতির আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নদ-নদী দূষণ ও দখল প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াটারকিপারস-বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। তিনি বলেছেন, নদীগর্ভেই বাংলাদেশের জন্ম। তাই নদী বাঁচাতে সরকারের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকল জলাশয়কে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে খুলনা প্রেস ক্লাবে ‘খুলনা মহানগরীর পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে প্রয়োজন, রূপসা-ভৈরব-ময়ূর-কাজীবাছা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ওয়াটারকিপারস-বাংলাদেশ, কোস্টাল ভায়েস অব বাংলাদেশ (কব) এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব  করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। স্বাগত বক্তব্য দেন কোস্টাল ভয়েস অব বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক কৌশিক দে।
বক্তব্য দেন বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মো: হেদায়েৎ হোসেন মোল্লা, জেষ্ঠ্য সাংবাদিক রকিব উদ্দিন পান্নু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পরভীন, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের সৈয়দ মিজানুর রহমান, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার, পোল্ট্রি ফিশ ফিড মালিক সমিতির সোহরাব হোসেন, সাংবাদিক ইয়াসিন আরাফাত রুমি,  আব্দুল্লাহ আল মামুন রুবেল, এ্যাওসেড সহকারী সমন্বয়কারী হেলেনা খাতুন, ছাত্র নেতা সৌমিত্র সৌরভ প্রমূখ।
।। নদী দূষণ ও দখল প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে : শরীফ জামিল ।।
দূষণ ও দখল প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে রূপসা ও ভৈরবের পরিণতি হবে বুড়িগঙ্গার মতো বলে আশংকা প্রকাশ করেন শরীফ জামিল। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় দূষণ বন্ধ হচ্ছে না। আর আইনের প্রয়োগ না হওয়ার অন্যতম কারণ নদীর দূষণ ও দখলের সঙ্গে জড়িতরা অনেক শক্তিশালী। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজস রয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে যারা নদীদূষণ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে জেলে পাঠাতে হবে।
রূপসা-ভৈরব-ময়ূর-কাজীবাছা নদীর দুষণ ও দখলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, লবণাক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি খুলনার জলাশয়গুলো ভয়াবহ দূষণের শিকার হয়েছে। এতে নদ-নদীগুলো ক্রমে ভরাট হয়ে স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। নদীগুলোর দুই তীর দখল হয়ে সেগুলো ধীরে ধীরে সংকীণ হচ্ছে। নদ-নদীগুলোকে বাঁচাতে অবিলম্বে পুনঃখনন করতে হবে। নদী দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নদী দূষণ রোধ করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে কৌশিক দে  বলেন, খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহমান রূপসা ও ভৈরব নদীর পানি ব্যাপক দূষণের কবলে পড়ে ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠছে। নদীর তীরে অবস্থিত ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য, ঝুলন্ত পায়খানায় নির্গত মানববর্জ্য, শত শত ড্রেন বেয়ে আসা ময়লা আবর্জনা এ দু’টি নদীর পানি বিষিয়ে তুলছে। এছাড়া অবৈধভাবে দখলের কারণে খাল ও নদীগুলো প্রতিনিয়ত সংকুচিত হয়ে আসছে।
সংলাপে নাগরিক নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনা মহানগরীর তিন দিক নদী দ্বারা বেষ্ঠিত। নগরীর পাশে রয়েছে রূপসা, ভৈরব, ময়ূর ও কাজীবাছা নদী। ভৈরব ও রূপসার দুই তীরে ফিস্ প্রসেসিংসহ ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক বর্জ্য নদীর পানিতে মিশছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া কারখানার বর্জ্য শোধন করে রূপসায় ফেলার নিয়ম থাকলেও খরচ বাঁচাতে অনেক প্রতিষ্ঠানই সে নিয়ম মানছে না। নগরীর দৌলতপুর-খালিশপুর এলাকায় তিনটি তেলের ডিপো ধোয়া-মোছার পর সেই তেলযুক্ত পানি সরাসরি ভৈরব নদে চলে যাচ্ছে। পরিবেশবিদদের মতে ভেসে থাকা তেলের কারণে সূর্যের আলো নদীর পানির নিচের স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে মাছ ও জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য পোনার নার্সারী গ্রাউন্ড ধ্বংস হচ্ছে। যা খুলনা মহানগরীর পরিবেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাই নদ-নদী রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে খুলনায় নদী ও খাল দখলে চলছে মহোৎসব। রূপসা ও ভৈরবের দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার তীর ভূমির অধিকাংশ স্থান অবৈধ দখলদারদের কবলে। হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারক কয়েকটি কারখানা, পাথরভাঙ্গা প্রতিষ্ঠান, বেশ কিছু দোকানপাট, বস্তি বাড়ি গড়ে উঠছে নদীর তীর দখল করে। খুলনার সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার ‘বড় বাজার’ এর একটি বড় অংশ নদী দখল করে আছে ব্যবসায়ীরা। বিআইডব্লিউটিএ ইতোপূর্বে একাধিক নদী দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করলেও দখলমুক্ত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে নাগরিক সমাজকে স্বোচ্ছার হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!