‘স্কুল ফাঁকি দিয়ে, প্রাইভেট শিক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে, নায়ক রুবেল ভাইয়ের অনেক সিনেমা দেখতাম। উনার ফাইট, অভিনয় দেখে এমন ভাবে ভীতরে ঢুকে গেলাম যে, মনে হতো আমিই নায়ক রুবেল। সিনেমা দেখে বাসায় এসে এটা সেটাই ঘুষি মারতাম, কলা গাছে ঘুষি দিতাম, বন্ধুরা মিলে অভিনয় অভিনয় খেলা করতাম। স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অভিনয় করতাম। যখন যেভাবে পারতাম অভিনয় করতাম। অভিনয়ে তখন আমার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা ছিলোনা। নায়ক রুবেল ভাইয়ের সিনেমা দেখে তাকে ফলো করতাম। অভিনয়ের প্রতি আমার প্রবল আসক্তি তৈরি হলো। এভাবে চলতে থাকে অনেকদিন। অভিনেতা হবার প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর মনোবল নিয়ে চেষ্টা করতে থাকি আমার অভিনয়ের স্বপ্নের পুরুষ নায়ক রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ এবং পরিচয়ের। ২০০৬ সালে সফল হই। তখন থেকে নায়ক রুবেল ভাইয়ের মাধ্যমে আমার অভিনয় জগতে পথচলা শুরু। শুরুতে আমাদের এক বড় ভাই মিডিয়া পার্সন মোল্যা ফরিদ আহমেদও আমাকে যথেষ্ট হেল্প করেছেন’।
খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই একজন অভিনয় শিল্পী হয়ে ওঠার পিছনের গল্পগুলো বলেন নাট্য শিল্পী সুমন আহমেদ বাবু।
ছাত্র জীবনে মার্শাল আর্ট রুবেলের সিনেমা দেখে অভিনয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ তৈরি হয় খুলনার ছেলে সুমন আহমেদ বাবুর। এক পর্যায়ে আগ্রহ থেকে আসক্তিতে পরিণত হয়। স্কুলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভিনয় শুরু করেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অভিনয়ের প্রতি আসক্তি এবং পারিবারিক উৎসাহে নিজেকে একজন দক্ষ অভিনেতা হিসেবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। নিয়মিত অভিনয় করছেন জনপ্রিয় সব ধারাবাহিক নাটকে। এ পর্যন্ত অভিনয় করেছেন অসংখ্য নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রে কমেডিয়ান চরিত্রেও।
দেশসেরা অনেক খ্যাতিমান অভিনেতার সাথে অভিনয় করে একজন দক্ষ অভিনেতা হিসেবে দেশব্যাপী নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন। তার স্বপ্নের পুরুষ যে চিত্রনায়ক রুবেলের সিনেমা দেখে অভিনয়ের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছিলো, সেই নায়ক রুবেলের মাধ্যমেই অভিনয় জগতে তার শুভ সূচনা হয়। পর্যায়ক্রমে অভিনয়ের সূত্র ধরে তৈরি হয় তার সাথে ঘনিষ্ঠতা। নায়ক রুবেল তাকে কাছে টেনে সেলফি তুলেছেন। খুলনায় একাধিকবার তাঁর বাড়িতে এসেছেন। এছাড়া দু ‘জনে বিভিন্ন প্রোগ্রামে একই সঙ্গে পারফর্মও করে থাকেন।
২০০৬ সালে দীপঙ্কর দীপন পরিচালিত “ঘরে ফেরা” নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সুমন আহমেদ বাবুর অভিনয় জগতে পদার্পণ। ২০০৭ সালে তাঁর স্বপ্নের নায়ক ও পরিচালক মাসুম পারভেজ রুবেল পরিচালিত “রক্ত পিপাসা” চলচ্চিত্রে কমেডিয়ান চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ব্যক্তিগত কারণে বেশ কিছুদিন অভিনয় থেকে দূরে থাকেন। ২০১২ সাল থেকে আবারও পুরোদমে শুরু করেন অভিনয়।
দেশসেরা নামকরা সব খ্যাতিমান পরিচালকের পরিচালিত নাটকের অভিনয় করে চলেছেন। অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও খ্যাতিমান পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলুর নাটকে। অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান অভিনেতা মোশারফ করিমের সঙ্গে। বর্তমানে তাঁর অভিনীত ধারাবাহিক নাটক মহাপন্ডিত” চ্যানেল নাইন এবং ফ্যামিলি ডিসটেন্স বৈশাখী টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচারিত হচ্ছে। এছাড়াও জনপ্রিয় এবং খ্যাতিমান বেশ কয়েকজন নাট্য পরিচালকের নির্মিত নাটকে অভিনয় করেছেন সেগুলো প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে।
নাট্য শিল্পী সুমন আহমেদ বাবু বলেন, “মনে হয় সারাক্ষণ আমি অভিনয়ের সাথে মিশে আছি। সর্বদা অভিনয়ের ভীতর থাকতে ভালোবাসি। অভিনয় হৃদয়ে ধারণ ও লালন করে চলেছি, অভিনয় আমার ধ্যান এবং খেয়াল। নিজে সর্বদা হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করি, অন্যকেও হাঁসাতে ভালোবাসি। আমার অভিনয় দেখে মানুষ হাঁসলে এর মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি এবং তৃপ্তি লাভ করি। তাইতো অভিনয়ে আমার পছন্দের শীর্ষে থাকে কমেডিয়ান চরিত্র। যে চরিত্রের অভিনয় দেখে মানুষ হাঁসবে”।
সুমন আহমেদ বাবু একজন ভালো উপস্থাপকও বটে। তার উপস্থাপনা খুবই সাবলীল এবং শ্রুতিমধুর। বিভিন্ন স্টেজ প্রোগ্রামেও তিনি উপস্থাপনা করে থাকেন। নাট্যশিল্পী ও উপস্থাপক সুমন আহমেদ বাবু’র জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা উত্তর বনিক পাড়া এলাকায়। পিতার নাম মো: অহিদুল্লাহ।
তিনি দেশবাসীকে ভারতীয় সিরিয়াল পরিহার করে দেশীয় শিল্পীদের অভিনীত ধারাবাহিক নাটকগুলো দেখার আহ্বান জানান।
খুলনা গেজেট/ টিএ