খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে কমিটি গঠন, ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি পরামর্শ দিবে: জনপ্রশাসন সচিব
  কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নঈম সেন্টুকে গুলি করে হত্যা

শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র খুলনা, লাঠিচার্জ-টিয়ালশেলে আহত ৬০, আটক শতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

‍খুলনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুর ২টায় নগরীর সাতরাস্তা মোড় থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা’ রয়েল মোড়, শান্তিধাম, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভিপাড়া, পিটিআই মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, অসংখ্য টিয়ারশেল ও কাদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে। এতে প্রায় ৬০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থীকে।

এর আগে নগরীর বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর রয়েল মোড় ও ময়লাপোতা মোড়ে মিছিলের চেষ্টাকালে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। ওই সময় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপক তল্লাশি চালায় আইনশৃংখলা বাহিনী। সড়কে যাতায়াতকারীদের মোবাইল ফোন  চেক করে লাল প্রোফাইল দেখলেই তাদের আটক করা হয়। মোট কতো জনকে আটক হয়েছে, সেই তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ।

দুপুর ১টার দিকে ময়লাপোতা মোড়ে পুলিশে ধাওয়া খেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আহসানুল্লাহ কলেজে আশ্রয় নেয়। তারা ভবনের ভেতর একটি কক্ষে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। পরে দরজা ভেঙে শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ।

আন্দোলনকারীরা জানান, সারাদেশে নিহত ছাত্রদের হত্যার বিচারের দাবিতে বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি ছিল। ‍খুলনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বেলা ১১টায় রয়েল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সকাল থেকে নগরীর রয়েল মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

বেলা ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা রয়েল মোড়ের আশপাশে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলেই তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের মোবাইল ফোন চেক করে করতে দেখা যায় পুলিশকে। পরে তারা ময়লাপোতার মোড়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে আটক করা হয় ১৭ জনকে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা কেডিএ অ্যাভিনিউ দিয়ে রয়্যাল মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ময়লাপোতা মোড়ের দিকে এবং কিছু সাতরাস্তার মোড়ের দিকে চলে যায়। এ সময় দুটি প্রাইভেটকার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ময়লাপোতে আবার শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। তখন কিছু শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ কলেজে আশ্রয় নেয়। শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ শেরে বাংলা সড়ক দিয়ে ময়লাপোতা মোড়ে প্রবেশ করে সিটি মেডিকেল কলেজের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিল ওই এলাকায় আসলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘাত এড়াতে ময়লাপোতা মোড়ে বিপুল সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

বেলা ২টার দিকে বেশকিছু শিক্ষার্থী সাতরাস্তা মোড়ে সড়কে বসে পড়ে বিক্ষোভ করে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের অবস্থানে লাঠিচার্জ শুরু করলে  সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ রয়েল মোড়, শান্তিধাম, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, বাইতিপাড়া, মৌলভিপাড়া, পিটিআই মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার ছাত্রদের যোগ দিতে দেখা যায়। পুলিশের মুহুমুহু টিয়ার সেল, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভয়ে আতংকে ওই সব এলাকার দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়।

বিকাল ৪টার কিছু আগে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার জানান, পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারসেলের আঘাতে কমপক্ষে ৬০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে। তাদের সন্ধ্যার মধ্যে মুক্তি দেওয়া না হলে আমরা স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হবো।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, খুলনায় বৈষম্য বা কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতারা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু কিছু যুবক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। সরকার ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করেছে। সহিংসতা ঘটনারও তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। পুলিশ বিভিন্নস্থান থেকে সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। তাদের যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খুলনা সার্কিট হাউজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার ১১ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের নিয়ে বৈঠক করেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মেয়র, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিংয়ে সমন্বয়করা কর্মসূচি প্রত্যাহারেরর ঘোষণা দেন।

তবে রাতেই শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ, প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাখান করেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্যাডে ‘স্পষ্ট বিবৃতি’ শিরোনামে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে ফেসবুক গ্রুপ ‘কেইউ ইনসাইডার’ এবং ‘থট বিহাইন্ড দ্যা কেইউ’ প্রকাশ করা হয়। এতোদিন এই দুটি গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি ঘোষণা এবং প্রকাশ করতেন।

স্পষ্ট বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চলমান আন্দোলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো সমন্বয়ক ছিলো না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক যে প্রেস ব্রিফিং করানো হয়েছে তা নোংরা রাজধানীর অংশ ছাড়া কিছুই নয়। এ অবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এই বিবৃতি প্রত্যাখান করছি।’

পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পক্ষ থেকে একই বিবৃতি দেওয়া হয়।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!