খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে এখনও মশাবাহিত এ রোগ মোকাবিলায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোরেশন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হয়নি আলাদা ওয়ার্ড। উল্টো স্থবিরতা দেখা দিয়েছে মশা নিধন কার্যক্রমে। নগরীতে এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশনও। এ অবস্থায় সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত নগরবাসী।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৮৩ জন। এর মধ্যে ১৭২ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ছয়জন এবং অন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ১৪ আগস্ট খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়।
শুধু খুমেক হাসপাতালে চলতি বছর ৫৫ জন চিকিৎসা নিলেও সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড চালু করা হয়নি। এ রোগে আক্রান্তদের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, আলাদা ওয়ার্ড চালু না করায় অন্য রোগীদের সঙ্গেই ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হচ্ছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে, কারণ আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর সেই মশা কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তাঁরও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিবছর আগস্টের শেষ দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। খুমেক হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় রোগী বেড়ে গেলে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে।
তবে এ ব্যাপারে খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, রোগীর চাপ এখনও কম আছে, সে কারণে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করার বিষয়ে পরিকল্পনা নেই। ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট পর্যাপ্ত আছে। রক্তের প্লাটিলেট সেপারেটর মেশিনও সচল রয়েছে।
এদিকে এক মাসের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নগরীতে স্থবির হয়ে পড়েছে খুলনা সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম। চলতি মাসে নগরীতে মশা মারার ওষুধ দিতে দেখা যায়নি। এ বছর চালানো হয়নি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানও। এ কারণে মশার প্রজনন বেড়েছে। এ ছাড়া নগরীতে এডিস মশার লার্ভা শনাক্তের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। কোন এলাকায় মশার বংশবিস্তার কেমন কিংবা লার্ভা বেশি কিনা, সে বিষয়ে ধারণা নেই সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের।
এ ব্যাপারে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে এখন মশা নিধনে লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, এগুলো দিলে তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাবে। তবে এখন ফগার মেশিন দিয়ে উড়ন্ত মশা মারা হচ্ছে। বৃষ্টি কমলে লার্ভিসাইড ও এডাল্টিসাইড দেওয়া হবে। এ ছাড়া এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার জানান, ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা যেসব বাড়িতে যাচ্ছেন, সেখানে তাদের সচেতন করছেন।
খুলনা গেজেট/হিমালয়