খুলনায় জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ঢাকার টিকিট পেয়েছে সবুজ দল। রোববার (২৪ নভেম্বর) খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে লাল দলকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এই সুযোগ পেয়েছে তারা।
খুলনা সবুজ দলের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৩৭ রান করে লাল দল। সবুজ দল ১৯ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষে পৌঁছে যায়।
রোববার খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় খুলনা লাল দল। খুলনা লাল দলের হয়ে শোভন ও আসলাম ওপেনিংয়ে নেমে ভালো জুটি গড়ে তোলে। তবে ২.৫ ওভারে আমিনুরের বলে ক্যাচ জীবনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাঁজঘরে ফেরেন শোভন। দলীয় ২৪ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙে খুলনা লাল দলের। ওপেনিং ব্যাটার শোভন ১২ বলে একটি বাউন্ডারী এবং দুটি ওভার বাউন্ডারীর সাহায্যে ব্যক্তিগত ২১ রান করেন। শোভনের পর দলীয় মাত্র ৪ রান সংগ্রহ করতেই আরেক ওপেনার আসলামের উইকেটের পতন ঘটে। ৮ বল খেলে ৩ রান সংগ্রহ করেন তিনি। ৪.২ ওভারে ৩১ রানে ব্যাটার তুর্যকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে খুলনা লাল দল। তবে দলের হাল ধরেন মিডল অর্ডার ব্যাটার ফারুক ও তানভীর। ফারুকের ব্যাটিং নৈপূণ্যে সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছায় লাল দল। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান সংগ্রহ করে খুলনা লাল দল। দলের হয়ে ফারুক ৪৭ বলে সর্বোচ্চ ৫৩ রান সংগ্রহ করেন। তার ব্যাট থেকে ৬টি বাউন্ডারী ও একটি ওভারবাউন্ডারী আসে। এছাড়া খুলনা লাল দলের হয়ে শোভন ২১, তানভীর ১৭ ও রায়হান উদ্দীন ১৩ রান সংগ্রহ করেন।
বল হাতে খুলনা সবুজ দলের হয়ে প্রমি সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট সংগ্রহ করেছেন। আর আমিনুর ২টি, এনাম ও সোহেল একটি করে উইকেট সংগ্রহ করেন।
১৩৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৯ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় খুলনা সবুজ দল। সবুজ দলের দুই ওপেনার মুন্না ও এনি দারুণ সূচনা করে। ২.৩ ওভারে ২৮ রান সংগ্রহ করে এই জুটি। ২.৪ ওভারে আকন্ত বল তুলে মারতে গিয়ে শোভনের হাতে ধরা পড়েন মুন্না। ওপেনিং জুটি ভাঙার দলের হাল ধরেন এনি ও আশিকুজ্জামান। তবে অর্ধশতকের আগে আশিকুজ্জামান ও এনির উইকেট হারায় সবুজ দল। মিডল অর্ডারে নেমে দারুণ ব্যাটিং করেন মঈনুল সোহেল ও দীপু। এই দুই অপরাজিত ব্যাটারের জুটি সবুজ দল জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায়। ফলে ৫ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সবুজ দল। আর এতেই ঢাকার টিকিট পেয়ে যায় তারা। ব্যাট হাতে সোহেল ৩১ বলে ব্যক্তিগত ৪৪ রান সংগ্রহ করেন। তার ব্যাট থেকে চারটি ওভার বাউন্ডারী এবং একটি বাউন্ডারী আসে। আর দীপু ২৭ বলে দুটি বাউন্ডারী এবং একটি ওভারবাউন্ডারী হাকিয়ে ব্যক্তিগত ৩১ রান সংগ্রহ করে। এছাড়া দলের হয়ে এনি ১৮, মুন্না ১৬ ও আশিকুজ্জামান ১৩ রান করেন।
জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খুলনা বিভাগের খেলায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন খুলনা সবুজ দলের মঈনুল সোহেল। তিনি ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪ রান সংগ্রহ করেন ও বল হাতে একটি উইকেট তুলে নেন।
এদিকে দীর্ঘদিন পর এই টুর্নামেন্ট ঘিরে খুলনায় ক্রীড়াপ্রেমিদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এর আগে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল। অনুষ্ঠানে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক সাফজয়ী ফুটবলার আমিনুল হক, জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু ও সদস্য সচিব দেবব্রত পাল, খুলনা মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল আলম তুহিনসহ নেতৃবৃন্দ।
বেলুন, ফেস্টুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এসময়ে অতিথির সাথে মঞ্চে ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার আশুলিয়ায় গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহীদ হামিদ শেখের পিতা তেরখাদার পানতিতা গ্রামের জাফর শেখ। শুরুতেই জাসাস খুলনা মহানগর শাখার পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীত এবং শহীদ জিয়ার উপরে প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শন করে।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘নাইস টু বি ব্যাক। অনেক অনেক দিন পর খুলনায় এসেছি। খুলনার অনেক ইতিহাস, অনেক স্মৃতি।
খুলনাকে ক্রিকেটের আঁতুরঘর বললেও ভুল হবে না। খুলনা অনেক জাতীয় ক্রিকেটারের জন্ম দিয়েছে। আজকের এই টুর্নামেন্টের আয়োজনে আমি খুবই খুশি।’
টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল বলেন, ‘প্রতিটি সাংগঠনিক বিভাগেই লাল ও সবুজ নামে দু’টি করে দল নিজেদের মধ্যে একটি করে ম্যাচ খেলবে। ১০ ম্যাচের ১০ জয়ী দলের সঙ্গে মূল পর্বে যোগ হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দল।
বিভাগীয় পর্যায়ের খেলাগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে হলেও ১৬ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় মূল পর্ব শুরু হবে। ১৯ জানুয়ারি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি’র সহযোগিতায় টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।’
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, খুলনার ম্যাচটিকে কেন্দ্র করে খুলনা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্বতস্ফূর্ত প্রাণচাঞ্চল্যের প্রকাশ পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর এখানকার দর্শকরা জাতীয় দলের সাবেক ও দেশসেরা সব ক্রিকেটারদের সম্মিলন দেখতে পেয়ে খুলনাবাসী ধন্য। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকার খুলনাসহ দেশের স্টেডিয়ামগুলোকে চরণভুমিতে পরিণত করেছে। সেগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা দেশের তরুণ সমাজের হাতে বল ও ব্যাট না দিয়ে তাদের হাতে মাদক তুলে দিয়েছেন। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মাদকের অভায়ারণ্যে পরিণত করেছিল। যুব সমাজকে তারা ধব্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে দিতে হবে। ছাত্র ও যুব সমাজকে খেলাধুলার দিকে ধাবিত করে সুন্দর খেলা উপহার দিয়ে মাদক মুক্ত খুলনা শহর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।
খুলনা গেজেট/ টিএ/এমএম