খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট
হত্যা নাকি আত্মহত্যা!

খুলনায় কলেজ ছাত্রী টুম্পার মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

সাগর জাহিদুল

বয়রা হাউজিং এস্টেট এলাকার গৃহবধু ও কলেজ ছাত্রী আখি আলম টুম্পার (২৪) মৃত্যু রহস্য নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। টুম্পার পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে আত্মগোপনে থাকা স্বামীর দাবি টুম্পা আত্মহত্যা করেছে।

গত শনিবার (২ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে আখি আলম টুম্পা (২২) নামের এক গৃহবধুর মরদেহ রেখে পালিয়ে যায় তার স্বামী আরমান হোসেন দ্বীপ। এঘটনায় টুম্পার মা রাবেয়া বাদী হয়ে নগরীর খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়রা উপজেলার আটরা গ্রামের ছুরাত আলম ও রাবেয়া দম্পতির বড় মেয়ে টুম্পা। কয়রা বাজারে তাদের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচ এস সি পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি। উচ্চ শিক্ষার জন্য খুলনায় চলে আসেন তিনি। ২০২২ সালে খুলনার বয়রা সরকারি মহিলা কলেজে ইসলামের ইতিহাস সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি হন তিনি।

টুম্পা সম্পর্কে যা জানা গেল

খুলনার বয়রা এলাকার একটি মেসে থাকতেন টুম্পা। বাড়ি থেকে যে টাকা দেওয়া হত তা দিয়ে দিন কাটানো খুব কষ্ট ছিল। নিজে চলার জন্য প্রথমে আইক্রিম ফ্যাক্টরীতে চাকরী করতেন। গত বছরের ২৩ অক্টোবর নুর নগর বিশ্বাসপাড়ার জাহাঙ্গীরের ছেলে আরমান হোসেন দ্বীপের সাথে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের পরিচয় গভীর সম্পর্কে পরিণত হয়। এক সময়ে দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বছরের ২৭ জুন তারা বিয়ে করে বয়রা হাউজিং এস্টেট এলাকায় পুলিশের টি আই আবুল বাসারের ৬ তলা ভবনের নিচ তলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। এই বাসায়ই মৃত্যু হয় টুম্পার।

টুম্পার মৃত্যু সম্পর্কে ছোট বোনের ভাষ্য

টুম্পার ছোট বোন জ্যোতি এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, দ্বীপের সাথে বড়বোনের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। তাদের বিয়ে হয়েছে কি না তা তিনি পরিস্কারভাবে জানাতে পারেনি। দ্বীপ অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘দারাজে’ সেলার হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তার অধীনে কর্মরত ছিলেন টুম্পা। ২ নভেম্বর দুুপুুরে বড়বোনের বান্ধবী মুন্নি মুঠোফোনে টুম্পার মৃত্যু সম্পর্কে জানালে তিনি তার মাকে সাথে নিয়ে খুলনায় আসেন। তিনি তার বোনের ঘাড়ের বাম পাশে ও বুকের ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।

তিনি বলেন, এটি আত্মহত্যা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আত্মহত্যা হলে দ্বীপ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাবে কেন। দ্বীপ এবং তার মাকে পুলিশ আটক করলে সব পরিস্কার হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

টুম্পার মৃত্যু সম্পর্কে দ্বীপের ভাষ্য

পলাতক থাকা দ্বীপের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, টুম্পা তার মা-বাবার সাথে অভিমান করে আত্ম-হত্যা করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করে বলেন, তার আগেও একটি বিয়ে আছে। সে ঘরে দু’টি সন্তান আছে। দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটি প্রথম স্ত্রী জেনে বিষয়টি মেনে নিয়েছে। দু’স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্য না হয় সেজন্য তিনি বয়রা হাউজিং এস্টেট এলাকায় বাসা ভাড়া করে টুম্পাকে নিয়ে বসবাস করতেন। টুম্পার বিয়েকে তার মা মেনে নিতে পারেনি। ওর ছোটবোন সরকারি বিএল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নতুনরাস্তা মোড় কবিরের বটতলা এলাকার মেসে থাকেন তিনি। গত ২৭ অক্টোবর টুম্পার মা রাবেয়া বেগম তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ছোটবোনের মেসে কয়রা থেকে একটি ছেলেকে নিয়ে আসেন। সে বিয়ের জন্য রাজি হয়নি টুম্পা।

তাদের সকলের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর টুম্পা বাড়িতে ফিরে আসে। পরের দিন ২৮ অক্টোবর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বীপের হাত থেকে একটি দামি মোবাইল ভেঙ্গে ফেলে। এতে রাগ হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় দ্বীপ। আর কোন যোগাযোগ রাখে না টুম্পার সাথে। আত্মহত্যার আগে ২ নভেম্বর রাতে দ্বীপকে ক্ষুদে বার্তা দিতে থাকে টুম্পা। এরপর দীর্ঘ সময় যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ওই রাতে ঘরে গিয়ে দেখে ফ্যানের হুকের সাথে ওড়না পেচিয়ে ঝুলে আছে টুম্পা। পরে কেচি দিয়ে ওড়না কেটে নিচে নামানো হয় টুম্পাকে। হাসপাতালের নেওয়ার জন্য প্রথমে আদদ্বীন হাসপাতালে এম্বুলেন্সের জন্য ফোন দেওয়া হয়। পরে ৯৯৯ ফোন করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে মানুষের কথার ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান তিনি। মুন্নিকে দিয়ে তার মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অপরাধী হলে ফোন বন্ধ করে রাখতাম। আইনজীবীদের পরামর্শে তিনি আদালতে আর্ত্মসমর্পন করবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে দ্বীপ আরো বলেন, টুম্পার বাবা আরেকটি বিয়ে করে। এজন্য প্রায়ই দুঃশ্চিন্তায় থাকতো টুম্পা। বাবা-মায়ের সাথে অভিমান করেই আত্মহত্যা করেছে টুম্পা বলে দাবি করেন দ্বীপ।

মৃত্যু সম্পর্কে পুলিশের বক্তব্য

সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিলন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, টুম্পার মা প্রথমে লাশ গ্রহণ করতে চাননি। পরবর্তীতে তার মা বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন, যার নং ৪। ধার ৯ ক/৩০। তিনি আরও বলেন, মরদেহের ভিসেরা রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বোঝা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। আসামি দ্বীপকে ধরার জন্য অভিযান চালানো হয়েছে।

এদি‌কে টুম্পার লা‌শের সুরতহাল রি‌পোর্ট করার সময় খা‌লিশপুর থানার এস আই শিল্পী আক্তার খুলনা গেজেটকে বলেন, মৃ‌তের বাম পা‌য়ের হাটুর নী‌চে ক্ষত চিহ্ন র‌য়ে‌ছে। সেটা কয়েক‌দিন আগের এবং গলায় অর্ধচন্দ্র আকৃ‌তির একটা দাগ ছিল ব‌লে তি‌নি উল্লেখ ক‌রেন।

খালিশপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সত্য ঘটনা উদঘাটনে আমরা জোর তদন্ত শুরু করেছি। ময়না তদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট হাতে আসলেই বোঝা যাবে এটি আত্মহত্যা নাকি অন্যকিছু।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!