খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৬০
  হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত, নিশ্চিত করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি
  ছাত্র আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটি

‘খুব শিগগিরই রোডম্যাপ’

গেজেট ডেস্ক

বস্ত্র ও পাট এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, অনেক কাজ নির্ধারণ হওয়ার পর রোডম্যাপ হবে। মাত্র দুই মাস, এর মধ্যে কেউ এখানে গণ্ডগোল করছে, কেউ ওখানে গণ্ডগোল করছে। এর মধ্যে আবার ভয়াবহ বন্যা। প্রশাসনকে রিঅর্গানাইজ করতে হচ্ছে। আশা করি খুব শিগগিরই রোডম্যাপ হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকা হয়েছে, যে কমিশনগুলো করা হয়েছে তারাও ডাকবে। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই রোডম্যাপ ঘোষণা হবে।

সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, ছয়টি সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এগুলো অনেক বড় ধরনের সংস্কার। তিন দিন বা তিন মাসে হবে না। এগুলোর দায়িত্বে যারা আছেন তারা নিশ্চয়ই পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা না করলে এগুলো টেকসই হবে না। শনিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি উলি­খিত সব কথা বলেন।

রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ-মানবাধিকার প্রসঙ্গ’ নিয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়নি যে, ওরা আমাদের দেশের পুলিশ। পুলিশের বন্দুক কীভাবে সিভিল পোশাকের মানুষের হাতে গেল? ৭.৬২ রাইফেল তারা কোথায় পেল? এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮টি পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, পুলিশে অবশ্যই সংস্কার হওয়া উচিত। তারা নিজেরাও সংস্কারের দাবি তুলেছেন। পুলিশ কমিশন গঠনে আমি অনেক দৃঢ় অবস্থানে আছি।

এ উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ নাৎসিদের মতো জঘন্য কাজ করেছে। এত কম সময়ে এত মানুষ কোথাও মরেনি। এজন্য শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতেই হবে। প্রয়োজনে আলাদা ট্রায়াল গঠন করতে হবে। আমি মনে করি, অভিযুক্তদের ফিরিয়ে আনার দরকার নেই। ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মতো তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার করা উচিত। হত্যার সব প্রমাণ আছে। নির্দেশদাতা হিসাবে শেখ হাসিনার বিচার হবে।

তিনি বলেন, ডিজিএফআইর কাজ ছিল আন্তঃবাহিনী নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে গেছে। পাঁচ তারিখ সরকার পতন না হলে আমি এবং আমার সঙ্গের লোকজন আয়নাঘরে বন্দি হতাম।

তিনি বলেন, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের নামের মধ্যে ‘নৌকা’ শব্দটি থাকায় এই মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে জাহাজ বন্দর মন্ত্রণালয় করার প্রস্তাব করব। আমাদের দেশে যে দলই ক্ষমতায় যায়, তারা সেই ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে রাখে। পলিটিক্যাল পার্টি অ্যাক্ট নিয়ে কাজ করা হবে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে, রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা নাগরিক সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।

সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান বলেন, বিগত সরকারের আমলে মানবাধিকার কমিশন নতুন নিয়ম অনুযায়ী স্বচ্ছতা ধরে রেখে খুব একটা কাজ করেছে বলে আমরা দেখতে পাইনি। কীভাবে কাজ করলে, কী করলে আমরা স্বৈরাচারের হাতে পড়ব না, তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান লিটন বলেন, আমাদের ঘুরেফিরে দিনশেষে আমাদের রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ফেরত যেতে হবে। মানবাধিকার কমিশন গঠনে কার্যকারিতায় কোনো স্বচ্ছতা নেই। পনেরো বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের চ‚ড়ান্ত রূপ হলো এই জুলাই-আগস্টের আন্দোলন। নিকট অতীত নিয়ে আলোচনা করা হয়, পূর্বের কথা বলি না। সরকারের উচিত যে স্থাপনাগুলোতে মানুষকে গুম করে রাখা হতো যেমন, আয়নাঘর, টর্চার সেল সেগুলোকে সংরক্ষণ করা। বিগত ১৫ বছরে ৬ হাজারের বেশি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। সেই সময়ে যারা তদন্তে ছিলেন তাদের আসামি হিসাবে যুক্ত করা প্রয়োজন।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, আইনের সংস্কারে কাজ করতে গেলে অনেক বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। পুলিশ কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিশন গঠন না হলে নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। দলীয় বিচারক, দলীয় বিচারপতি তথা দলীয়করণ থেকে বের না হয়ে এলে কোনো লাভ নেই। আইন আছে কিন্তু তার কোনো প্রয়োগ নেই। গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আমাদেরও অনেক আশা ছিল। কমিশন আগেও ছিল। কিন্তু সেখানে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম, কিন্তু ফল পাইনি। রাষ্ট্রের চরিত্র বদলাতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কারে তরুণদের সম্পৃক্ততা নিয়ে কাজ করতে হবে। ছাত্রদের যদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ব্যবহার না করা যায়, তাহলে জাতি হিসাবে আমরা ব্যর্থ।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে আমলাদের নিয়ে মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনে আইনজীবী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো প্রতিনিধি ছিল না। যে প্রতিষ্ঠান অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকবে, সেই প্রতিষ্ঠান তদন্ত করতে পারবে না। স্বাধীন তদন্ত সংস্থা থাকা প্রয়োজন। সংঘবদ্ধভাবে অন্যায় সংঘটিত হয়েছে। ফলে সরকারের আজ্ঞাবহদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার সময় আইনের প্রয়োগ নিয়ে কথা বলি। তবে মানবাধিকারের মূল বিষয় হলো মানবিকতা। মানবাধিকার কমিশন বা অন্যান্য সংস্থা তৈরি করা হয়েছে সরকারের আজ্ঞাবহ হিসাবে। স্বতন্ত্র সংগঠন হিসাবে কাজ করতে না পারলে আজ্ঞাবহ হয়েই থাকতে হবে এই সংস্থাগুলোকে।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, আমাদের দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে আজকের এই আলোচনার প্রয়োজন হতো না। সংখ্যালঘুদের অধিকার কীভাবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই? সেই আলোচনা করা প্রয়োজন। আইন, বিচার ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সংস্কারের প্রয়োজন। সংস্কারের সময় সাংস্কৃতিক সংস্কারেরও প্রয়োজন। তা না হলে মব জাস্টিস আরও বাড়বে।

মানবাধিকার কমিশনের কাছে প্রশ্ন রেখে ‘মায়ের ডাক’র আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে পারছি। বিগত ১২ বছরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক মাধ্যমে যখন সরকার বারবার বলছিল, বাংলাদেশে গুম বলে কিছু নেই, তখন মানবাধিকার কমিশনের কাজ কী ছিল? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ তারা করেনি।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল­ব চাকমা, নারী অধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান, অধিকার কর্মী জয়া শিকদার, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নাইমা আক্তার রীতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তৌহিদ সিয়াম ও জি নাইনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ প্রমুখ।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!