খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  আসামিদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা
  হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে অপসারণ করেছেন রাষ্ট্রপতি
  ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে বাধা নেই, হাইকোর্টে রিট খারিজ

ফুলে ফুলে লেখা ক্যাম্পাসের কবিতা

আল মামুন, খুবি

বাংলাদেশের ঋতুচক্রে প্রকৃতি প্রতিনিয়ত নতুন রূপে ধরা দেয়। গ্রীষ্মের দাবদাহের মাঝে যখন জীবন ক্লান্ত, তখন প্রকৃতির রঙিন আলিঙ্গন যেন এক প্রশান্তির বাতাস বয়ে এনেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতি নিজেই যেন হয়ে উঠে শিল্পী। জারুলের বেগুনি, কৃষ্ণচূড়ার লাল, সোনালি ঝরণার দীপ্তি, লাল পদ্মের শান্ত রূপের পাশাপাশি দেখা মেলে সূর্যমুখীর উজ্জ্বলতা আর কাঠগোলাপের সূক্ষ্ম সৌন্দর্যের। সব মিলিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই পরিচিত তার নির্জন, সবুজ-ঘেরা পরিবেশের জন্য। কিন্তু এপ্রিল-মে মাস এলেই এই ক্যাম্পাস যেন হয়ে ওঠে এক ফুলেল উৎসবের কেন্দ্রস্থল। বিভিন্ন ডিসিপ্লিন ভবনের চারপাশ, মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবন কিংবা ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক ভবন-সবখানেই জারুল ও কৃষ্ণচূড়া আর সূর্যমুখীর ঝাঁকড়া ফুল শোভা ছড়ায়। বিশেষ করে সূর্যমুখী ফুলের উজ্জ্বলতা দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থী উভয়ের নজর কাড়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাসে হাঁটেন চারিদিকের এই সৌন্দর্য তাঁদের চোখ জুড়িয়ে দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সৃজনশীলতার  প্রশংসা করে বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক তোজাম্মেল হক বকুল বলেন, ‘প্রকৃতির সাথে মানুষের মনের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আর প্রকৃতির যে উপাদানটি মানুষের মনে সবচেয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে তা হচ্ছে ফুল। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুল, সোনালি ঝরনা, লাল পদ্ম আর কৃষ্ণচূড়ার ঋতুচক্র আর বিশেষ করে কাঠগোলাপ আর সূর্যমুখী আমাদের মনে করিয়ে দেয় সময়ের পরিবর্তন আর তার সৌন্দর্য। শিক্ষার্থীরা যখন এই ফুলের ছায়ায় সময় কাটায়, তখন তাদের মনও নির্মল হয়, চিন্তাও প্রসারিত হয়। আমি মনে করি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাণবন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ তাদের মননশীলতা ও সৃজনশীলতাকে বাড়িয়ে দেয়।“

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই সৌন্দর্যের মধ্য দিয়ে পথচলা করেন, ক্লাসে যান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন, কখনওবা নিরিবিলি কোন গাছতলায় বসে থাকেন। এসব মুহূর্ত যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।

ডেভেলপমেন্ট ডিসিপ্লিনের আসিফ হাসান আকাশ বলেন, “প্রতিদিন ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় যেন একটানা কোনো রঙিন চিত্রকলা ভেসে আছে চারপাশে। জারুলের নরম বেগুনি ছায়া, সোনালি ঝরনার উজ্জ্বলতা, লাল পদ্মের শান্ত রূপ,, সূর্যমুখীর দীপ্তি, কৃষ্ণচূড়ার আগুনে লালিমা সব মিলে এক অপূর্ব আবহ তৈরি করেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শুধু চোখের আরাম নয়, মনকেও প্রশান্ত করে।“

একটু কাব্যিক ঢং এ ফুলের সৌন্দর্য প্রকাশ করেন বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী শায়লা শারমিন রাহি। তাঁর চোখে এই ক্যাম্পাস যেন এক কবিতার বই,
“এই সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যেন ফুলের এক জীবন্ত কাব্যগ্রন্থ। প্রতিটি জারুলের ফুল যেন কোনো অচেনা ভালোবাসার গল্প বলে। সোনালি ঝরনার পাতায় পাতায় ঝরে পড়ে রোদেলা স্বপ্ন। লাল পদ্মের শান্ত সৌন্দর্য আর কৃষ্ণচূড়ার উদ্দাম রঙ—সব মিলিয়ে আমাদের প্রতিদিনের ক্লাসের ক্লান্তি যেন হারিয়ে যায় এই প্রকৃতির মাঝে। এমন ক্যাম্পাসে পড়তে পারাটা সত্যিই সৌভাগ্যের।“

ফুলের সৌন্দর্য শুধু চোখ ধাঁধানো দৃশ্য নয়, এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তি এবং সৃজনশীলতাকেও জাগিয়ে তোলে। মনোবিজ্ঞান গবেষণায় দেখা যায়, প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা মানুষ বেশি মনোযোগী, সৃজনশীল এবং মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও পরিবেশবান্ধব এই কাঠামো রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। বৃক্ষরোপণ, পরিচর্যা ও ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে নিয়োজিত রয়েছে আলাদা টিম। ফলে প্রতিটি মৌসুমেই ফুটে ওঠে নতুন রূপ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য কেবল একটি ঋতুর গল্প নয়-এটি একটি অনুভবের জায়গা, এক মননের জগৎ। শিক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতির ছোঁয়ায় গড়ে উঠছে এক মানবিক, সচেতন ও সৃজনশীল প্রজন্ম।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!