বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধি করল সরকার।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তার ছোট ভাই শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির সময় বৃদ্ধির একটি আবেদন করেছিলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা সেটি অনুমোদন দিয়েছি। শর্তগুলো সব আগের মতোই থাকবে।’
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিন দফায় ছয় মাস করে ১৮ মাস মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আগে খালেদাকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করে দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। তবে আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, স্থায়ীভাবে মুক্ত করার এখতিয়ার আদালতের।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আবেদনের বিষয়ে মতামত দেন। তাতে খালেদার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেন মন্ত্রী। আগের তিন দফার মতো এবারও বিদেশে না যাওয়া এবং বাড়িতে চিকিৎসার শর্তে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে সাজা বেড়ে হয় দ্বিগুণ।
উচ্চ আদালতের আদেশের পর দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় হয় বিচারিক আদালতে। এ মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড পান বিএনপি নেত্রী। ফলে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর।
দুই মামলায় খালেদার জামিন নিশ্চিত করতে বিএনপির আইনজীবীদের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তার স্বজনরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন নিয়ে যান। সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত হলে সাবেক সরকার প্রধানকে দুই শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি দেয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বিএনপি নেত্রী ফেরেন তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়।
খালেদার সাময়িক মুক্তি পাওয়ার শর্ত দুটি হলো: বিএনপি নেত্রী দেশেই চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি বিদেশে যাবেন না।
গত এপ্রিলে খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হলে বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। তবে সরকার সে দাবি নাকচ করে। জানানো হয়, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আর তিনি তা গ্রহণ করলেই কেবল বিদেশে যাওয়ার সুযোগ আছে।
দ্বিতীয় আরেকটি পথ হলো আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণ হয়ে আসা। কিন্তু জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগে আর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট বিভাগে শুনানিতে বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছেন না।
খালেদা জিয়া বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরার পর তার সাময়িক মুক্তির মেয়াদ পরে ছয় মাস করে দুই দফায় বাড়ানো হয়।
তৃতীয় দফায় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর। এবার চতুর্থ দফায় মুক্তির মেয়াদ বাড়নোয় তার আরও ছয় মাস কারাগারে যেতে হবে না।
বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে এই দুটি মামলা ছাড়াও আরও অন্তত ৩০টি মামলা আছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় আছে।
খুলনা গেজেট/এনএম