খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস

খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন বাতিল

গেজেট ডেস্ক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। সাত মাস আগে গত ৬ মে তিনি এই আবেদন করেছিলেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট নবায়নের ওই আবেদন করা হয়েছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় আইন অনুযায়ী তাঁর পাসপোর্ট পাওয়ার সুযোগ নেই।

সরকার নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাঁকে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছে। বর্তমানে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার পরিবার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে একাধিকবার সরকারের কাছে আবেদন করেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন আগে দুইবার আইনিভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। বর্তমান আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সার্বিক বিষয়ে আইনে কোনো উপায় আছে কি না,

সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেও খালেদা জিয়াকে নতুন করে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে।

এর আগে একাধিক আওয়ামী নেতার বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইলে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি মানবিকভাবে দেখবেন।

পাসপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, ‘ওই সময় আমাদের বলা হয়েছিল, ম্যাডামের পাসপোর্ট হয়ে গেছে। এসে নিয়ে যান। যাওয়ার পর বলে, একটু সমস্যা আছে। পরে নিতে হবে। এরপর আর কোনো তথ্য আমাদের জানানো হয়নি।’

গত ৬ মে খালেদা জিয়ার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়নের আবেদন করা হয়। এখন দেওয়া হচ্ছে ই-পাসপোর্ট। তাই নবায়ন করতে হলে খালেদা জিয়াকেও ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হবে। এমআরপি পাসপোর্ট হলে নতুন করে ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ না নিয়েই নবায়নের সুযোগ ছিল। ই-পাসপোর্টের বেলায় নতুন করে ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের ছবি নিতে হয়।

তবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সারা দেশেই এখন ই-পাসপোর্ট করা হচ্ছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়ার সুযোগ আছে।

খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশান ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী বলেন, ‘আজ পর্যন্ত (গতকাল) নতুন কোনো আবেদন আমরা পাইনি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৮ মে খালেদা জিয়ার নামে এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৭ মে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়। এমআরপি পাসপোর্টে তাঁর জন্মস্থান লেখা রয়েছে দিনাজপুর।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবীর বলেন, ‘২০১৪ সালে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন ম্যাডাম। তিনি সেখানে গিয়ে আঙুলের ছাপ দেওয়া, ছবি তোলাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছিলেন।’

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তার পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ নেই। আইনে বলা আছে, ফৌজদারি অপরাধে কোনো ব্যক্তির শাস্তি হলে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই বছর পর পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সরকার নির্বাহী আদেশে পাসপোর্ট করে দিতে পারে।

খালেদা জিয়ার শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে তার আর রক্তক্ষরণ হয়নি। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, এটা সাময়িক। যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তক্ষরণ হয়। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনও কমে আসে। ওই দিনই রক্ত বন্ধ করতে তার শরীরে ইনজেকশন প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা। এর আগে ১৩, ১৭ ও ২৩ নভেম্বর রক্তক্ষরণের কারণে তিনি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া নানা রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিনই মেডিক্যাল বোর্ড বসে তাঁর চিকিৎসায় করণীয় ঠিক করছেন। রক্তক্ষরণ বন্ধে তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এর পরও রক্তক্ষরণ হবে না- এমনটি বলার উপায় নেই। তিনি এখনো সিসিইউতে আছেন।

গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখা করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, ‘ম্যাডামকে খুবই দুর্বল মনে হয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, তাঁর যে চিকিৎসা দরকার, তা এই অঞ্চলে নেই। দ্রুত তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানি পাঠাতে হবে।’

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক দলের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘কালবিলম্ব না করে আপনাদের বাঁচার স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করতে পাঠান। তাঁকে সুস্থ করে দেশে নিয়ে আসুন। নইলে আপনাদের অবশ্যই জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’

গত ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে এয়ারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৮ নভেম্বর রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ড জানায়, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। সূত্র : কালের কন্ঠ।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!