সম্প্রতি কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও করা কিংবা ফেসবুকে লাইভ করার যে প্রবণতা, তা দেখা গেল পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণের পরও, যা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন সেখানকার স্বেচ্ছাসেবীরা।
পঞ্চাশোর্ধ্ব গাজী আতাউর রহমান সিদ্দিক বাজারের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার রাতে ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার সময় ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই বলেন, আমরা ব্যাকটি মিল্লা চিল্লাইতাছি- ওই ভাই ধরেন ধরেন। আর মাইনষের কুনো বিবেক নাই। খালি ভিডিও আর ভিডিও করতাছে।
মঙ্গলবার বিকালে নর্থ সাউথ রোডের পাশের সাততলা ওই ভবনে বিস্ফোরণের পর স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন সবার আগে, এরপর ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এলে তাদের সহযোগিতায়ও ছিলেন তারা।
বিস্ফোরণে ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ফ্লোরের একাংশ খসে পড়ে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় আশপাশের ভবনগুলোর কাচ চুরমার হয়ে পড়ে ফুটপাতে, সড়কে থাকা বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিস্ফোরণ যখন ঘটে, তখন এলাকাটি ভিড়ে ঠাসা। প্রচণ্ড শব্দে হতবিহ্বল মানুষ প্রথমে যে যেদিকে পারে দৌড় দেয়। সম্বিত ফিরে পেয়ে ঘটনাস্থলের সামনের সড়কে অনেক রক্তাক্ত মানুষকে পড়ে থাকতে দেখে তারা। তখন অনেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে শুরু করেন।
ওই ভবনের উত্তর পাশে আনুমানিক একশো গজ দূরেই বিআরটিসির ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল।তার পাশের তরুণ চা দোকানি সোহরাব হোসেন বলেন, ঘটনার পর সামনে এগিয়ে দেখেন বহু রক্তাক্ত মানুষ। তারা কয়েকজনকে রিকশায় তুলে দেন। তখনও অনেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলছিল।
বিআরবি কেবলসের কর্মী মেজবা আহমেদ বলেন, আমি নামাজে যাইতাছিলাম। প্রচণ্ড শব্দে সব কাঁইপা উঠল। এরপর খালি ধুমা ধুমা। আইসা দেখি আল্লাহরে আল্লাহ… মানুষ সব রাস্তায় পইড়া গোঙাইতাছে। গলাকাটা গরু যেমন শব্দ করে সেইরম। কারও কাপড় চোপড় ফাইড়া গেছে, লুঙ্গি পুইড়া গেছে। আশপাশে স্যানেটারি মাল নেওয়ার ভ্যান আছিল। সেইগুলাতেই কয়েকজনকে উঠাইলাম।
তার মধ্যেই অনেকের ভিডিও করার দৃশ্যটি চোখে পড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, খালি ভিডিও আর ভিডিও করতাছে মাইনষে। পইড়া থাকা লোকগুলানরে ধরার লোক পাওয়া যায় না। এইসময় সেনাবাহিনীর একটা গাড়ি আছিল এইহানেই। হ্যাগো গাড়িতে ১০-১২জনরে তুইলা দেওয়া হইল, হ্যারা টান দিয়া হাসপাতালে নিল।
আনোয়ার বলেন, বিস্ফোরণের পর গাড়িটা রাস্তার একপাশে রাখেন তিনি। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত ভুরি ভুরি মানুষ মোবাইল ফোন হাতে তার সাক্ষাৎকার নিতে আসেন। নানাজনের নানা প্রশ্ন। কেউ লাইভ করছেন ফেসবুকে, কারও আছে ইউটিউব চ্যানেল।
আনোয়ার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, মানুষের কোনো বিকার নাই! আমার ক্ষতিপূরণ কী করে হবে, আমি সেই চিন্তা করছি, আর তারা এসে খালি ভিডিও করে।
কাছেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থাকায় কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব নেয়। আশপাশে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরাও ঘটনাস্থলে এসে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেন। কারণে ভিড়ের কারণে উদ্ধারকর্মীদের কাজে সমস্যা হচ্ছিল।
তবে ভিড় সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। বারে বারে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে লাঠি হাতে তেড়ে আসছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তাতে কৌতূহলী মানুষকে কিছুদূর হটানো গেলেও পরক্ষণেই আবার ফিরে আসছিলেন তারা।