বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান (রহ:) মাজার দীঘিতে মারা যাওয়া কুমিরের ময়না তদন্ত শেষে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) গভীর রাতে মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলীর নেতৃত্বে দীঘির প্রধান ঘাট সংলগ্ন এলাকায় কুমিরটি কে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
এর আগে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর, খুলনা‘র পরিচালক ডা. মো. লুৎফর রহমানের তত্বাবধায়নে কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় কুমিরটির ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে তিন মাসের মত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ডা: মো: লুৎফর রহমান।
তিনি বলেন, কুমিরটির শরীরে কোন ধরনের কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের জন্য কুমিরের দেহের প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেতে আনুমানিক দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে । তখন মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে।
ডা. মো. লুৎফর রহমান আরও বলেন, ২০২১ সালের ১২ জুন এই কুমিরটি বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল। তখন পানির উপরে শুকনো জায়গায় দুই সপ্তাহ রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। কুমিরটি মাথা ও চোখে কিছু সমস্যা ছিল। আমরা তখন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছিলাম। তারপর বেশ সুস্থ ছিল।
প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, কুমিরটি ঘাটের পাশে মাটি চাপা দিয়েছি। কুমির মৃত্যুতে আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছি। এই দীঘির অন্যতম ঐতিহ্য মিঠা পানির কুমির। এই দীঘিতে বর্তমানে একটি নারী কুমির রয়েছে। এই কুমিরটিকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন ও প্রানি সম্পদ বিভাগের কাছে আবেদন জানান এই খাদেম।
সুলতানী শাসন আমলে খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে হযরত খান জাহান আলী (রহ:) বাগেরহাটে ‘খলিফাতাবাদ’ নগর বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।
এ সময় তিনি এই অঞ্চলে ৩‘শ ৬০টি দিঘী খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দিঘি’। যে দিঘীর পাড়ে তার সমাধী রয়েছে। এই দিঘীতে তিনি দুটো মিঠাপানির প্রজাতির কুমির ছেড়ে ছিলেন। যাদের নামছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’।
খানজাহান (রহ:) এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির দুটিকে নিয়মিত খাবার দিতেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ওই কুমির যুগলের বংশ ধরেরা এখানে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু বিভিন্ন সময় মারা যাওয়ার কারণে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের বংশধররা শঙ্কায় পড়ে।
সর্বশেষ ২০০৬ সালে দিঘির কুমির ‘কালা পাহাড়’ এবং ২০১৫ সালে ‘ধলা পাহাড়’ কুমিরটি মারা যায়। ধলা পাহাড় নামক কুমিরটির চামড়া বাগেরহাট যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
এরই মাঝে মাজারে কুমিরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে ৬টি কুমির এনে মাজারের দিঘিতে ছাড়া হয়। নিজেদের মধ্যে মারামারি করে দুটি কুমির মারা যায়। দুটি কুমির সুন্দরবনের করমজলে পাঠানো হয়। অবশিষ্ট দুটি কুমির এতদিন এই মাজারে ছিল। এদের মধ্যে নারী কুমিরটি কয়েকবার ডিম পাড়লেও, কোন বাচ্চা হয়নি।
সব শেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে পুরুষ (বড়) কুমিরটির মরদেহ ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে প্রশাসনের নির্দেশে কুমিরটিকে উপরে তোলা হয়।
খুলনা গেজেট/ টিএ