স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে ঘর বাঁধতে চায় প্রতিটি নারী। কিন্তু সেই ঘরবাধা স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল বিয়ের ৭ বছর পরে নার্গিস খাতুনের। স্বামী তাকে ছেড়ে অন্য জায়গায় সংসার বিয়ে করেন। তখন পাঁচ বছর বয়সের একটি মেয়েকে নিয়ে ঠাঁই হয় নাকসা গ্রামে বাপের বাড়ির এক ভাইয়ের বারান্দায়। সেখানে কপোতাক্ষ নদীতে মাছ ধরে ও লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে চলতে থাকে তার সংসার। নিজের একটি মাথাগোজার ঠাঁই করার অনেক স্বপ্ন ছিল তার। তবে স্বল্প আয় দিয়ে কোন রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে ছিল মেয়েকে নিয়ে, ঘর বাধা হয়ে ওঠেনি তার পক্ষে।
জন্মের আগে পিতাকে হারিয়ে এতিম হয়ে পৃথিবীর মুখ দেখেন। মাকে হারান ১ বছর বয়সে। তখন ৭ বছর বয়সের বড় বোন রাশিদা খানম তাকে বড় করেন। বড় বোন নিজে লেখাপড়া না শিখে বিয়ে না করে কষ্ট করে ছোট বোনের পড়ালেখার খরচ সংগ্রহ করেন। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তির্ন হন আম্বিয়া। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেবে। তবে আকস্মিক মানসকি ভারসাম্য হারানোয় ভেঙ্গে গেল তাদের স্বপ্ন। বড় বোন রাশিদা খাতুন দর্জি কাজ করে কোন রকমে চলতে থাকে দুই বোনের সংসার। তবে বয়সের ভারে আর শরীরের অপারগতায় রাশিদার পক্ষে এখন আর সম্ভব হয়ে হচ্ছে না দর্জি কাজ করা। আম্বিয়ার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকায় চলছে দু’বোনের সংসার। শিশুকালে দু’জনের পিতা মাতা মারা যাওয়ায় সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হয় তারা। পাকা ঘরে বাস করার স্বপ্ন তাদের কাছে দুরাশা ছাড়া কিছুই নয়।
নার্গিস আর আম্বিয়া আজ শনিবার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুজিববর্ষের সেরা উপহার ঘরসহ জমি। ঘর পেয়ে খুশিতে তারা উল্লাসিত। শুধু নার্গিস ও আম্বিয়া নয়, এমনই প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন পার করে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে খুলনার কয়রা উপজেলায় ৫০টি গৃহহীন পরিবার পেল সেমিপাকা গৃহ ও ২ শতাংশ করে জমি।
২৩ জানুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্স’র মাধ্যমে এক যোগে মালিকানা সনদ হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরই অংশ হিসেবে কয়রা উপজেলা প্রশাসনের নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রথম ধাপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন ৫০টি পরিবারের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে মালিকানা সনদ ও চাবি হস্তান্তর করেন কয়রা উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন প্রাণী সম্পদ অফিসার কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ , সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাডঃ কেরামত আলী,সাব-রেজিষ্টার দিপংকর দাশ, কপোতাক্ষ কলেজের অধ্যক্ষ অদ্রিশ আদিত্য মণ্ডন, সমাজসেবা অফিসার অনাথ কুমার বিশ্বাস, সহকারী প্রোগ্রামার (আইসিটি) লিডম পাল বালা, উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুর রহমান তালুকদার, প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত, উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান, সকল ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ। এছাড়াও উপকারভোগী পরিবার, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই