জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকির অর্থায়ন ও বীমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলের তৃণমূল বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে জেলা পর্যায়ে এক প্রকল্প অবহিত করণ সভা সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা শহরের কোরাইশী ফুড পার্কে অনুষ্ঠিত হয়।
অ্যাওসেডের নির্বাহী পরিচাল শামীম আরফিনের সভাপতিত্বে সভায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডঃ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। সভায় বিষেশ অতিথি ছিলেন, সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা (সার্বিক) মঈনুল ইসলাম মঈন, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এসএএম আব্দুল ওয়াহেদ, কেয়ার বাংলাদেশের হিউম্যানিটেরিয়ান এন্ড রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর মৃত্যুঞ্জয় দাস।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনা অংশ নেন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাংবাদিক গোলাম সরোয়ার, সুশীলনের উপপরিচালক মোস্তফা মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ওলিউর রহমান, লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল, উত্তরণের এড মনিরউদ্দীন প্রমুখ।
সভায় বক্তরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বল্পমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতির কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়। আর কিছু ক্ষয়ক্ষতি আছে যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। যার আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সামাজিক অস্থিরতা, স্বাস্থ্যহানি, পরিবেশের ক্ষতি, কৃষির ক্ষতিসহ নানাদিক রয়েছে যা সঙ্কট সৃষ্টি করে। কিন্তু এ সঙ্কটে আর্থিক মূল্য পরিমাপ ও নির্ধারণ করা কঠিন। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট চিহ্নিত করাসহ সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে পরিমাপ করা জরুরি।
বক্তারা আরো বলেন, উপকূলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান না থাকা এবং কাজের সমন্বয় না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে কাজ করলেও সেই কাজ স্থায়ী হচ্ছে না। অনেক সংস্থা উপকূলে সুপেয় পানির সংকট নিয়ে কাজ করলেও আজও ৫ কিলোমিটার দুর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। সংকট সমাধানে উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড দরকার। তাহলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সমন্বয় হবে এতে করে উপকূলে যে কাজ হচ্ছে সেগুলো স্থায়ী উন্নয়ন হবে। উপকূলের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সাইক্লোন সেল্টার না থাকায় এই এলাকার মানুষ সাইক্লোন সেল্টারে যেতে চাই না। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অ্যডাপটেশন ও মাইগ্রেশনে অর্থায়নের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সভায় সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডঃ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, পরিবেশ এখন মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে গেছে। গাবুরায় পানি সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। ওই এলাকার অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। ভোটের সময় ভোটার, পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থী খুজে পাই না। তারা সেখানে সমস্যায় পড়ে আবার এসেও সমস্যায় পড়ে। মাঠে থাকতে সমস্যার কথা বলা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেনতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষতিপুরণের দাবি এই অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জাতীয় দাবী হওয়া প্রয়োজন এবং আন্তজার্তিক ভাবে আমরা আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারবো। আমাদের এই দাবি আদায়ের জন্য সবাইকে স্বোচ্ছার হতে হবে।
সভায় প্রকল্পের ধারণা সম্বলিত মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন অ্যাওসেড’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক হেলেনা খাতুন এবং কেয়ার বাংলাদেশের হিউম্যানিটেরিয়ান এন্ড রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের টেকনিক্যাল কোর্ডিনেটর হিমাদ্রী শেখর মন্ডল। উপস্থাপনায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় কেয়ার পরিচালিত চলমান ও আসন্ন প্রকল্প ও ম্যাপ সিডিআরএফআই প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবেচিত নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
এসময় আয়োজকরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বৈশ্বিক ও স্থানীয় তহবিল গঠনের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা পর্যায়ে সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারিখাত এবং একাডেমিয়ার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ম্যাপ-এর কাঠামো, সমন্বয় এবং নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করা হবে। জার্মান দাতা সংস্থা এমজেড ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের অর্থায়নে কেয়ার বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তায় ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাওসেডের উদ্যোগে বাস্তবায়িত তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
তারা আরো বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সরকার, সুশীল সমাজ, বেসরকারী খাত, একাডেমিয়ার প্রতিনিধি ও বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত মাল্টি-অ্যাক্টর প্লাটফর্ম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি সুনির্দিষ্ট করতে তৎপরতা বৃদ্ধিসহ ক্ষতিপূরণের জন্য জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ ও সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য বিভিন্ন ফোরামে আওয়াজ তোলার পাশাপাশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
সাতক্ষীরার ও বাগেরহাটের ২৭৫০ অংশগ্রহণকারীকে এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারিত। সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ইসললামকাটি, খেশরা ও জালালপুর এবং বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা, ধানসাগর ও সাউথখালি ইউনিয়নকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়।
খুলনা গেজেট/ টিএ