ফুটবল এবং অ্যাথলেটিক্সে মোঃ টিপু সুলতানের সুনাম, খ্যাতি এবং জৌলুস ছিল দীর্ঘদিন। ১৯৭৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্রীড়াঙ্গনে ছিল তার গৌরবময় অধ্যায়। ফুটবল এবং অ্যাথলেটিক্সে সমানভাবে তিনি পারদর্শী দেখিয়েছেন।
ফুটবলে ঢাকার মাঠ কাঁপিয়েছেন দাপটের সাথে। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছর খুলনা জেলার হয়ে জাতীয় দলে খেলেছেন সুনামের সাথে। ১৯৭৮ সালে জাতীয় যুব ফুটবলে খুলনা জেলা দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়ার হিসেবে পারদর্শিতা দেখান এবং খুলনা জেলা দল সেবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পোলভল্ট ইভেন্টে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
একই গ্রামের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ এবং ফুটবলার মরহুম খান জহুরুল হক এবং তার ভাই মরহুম খান ফজলুল হকের উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় ছাত্র জীবন থেকে খেলাধুলার অঙ্গনে প্রবেশ করেন। এরপর একের পর এক সাফল্য দেখাতে থাকেন।
বাড়ির সামনে ওয়াই এম এ ক্লাবের বিশাল মাঠ। মাঠে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতেন। দিঘলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত পরপর তিন বছর আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পোলভল্ট ইভেন্টে খুলনা বিভাগ ও যশোর বোর্ডে প্রথম স্থান লাভ করেন। এবং ১৯৭৫ সালে আন্তঃস্কুল জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় একই ইভেন্টে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৯৭৭ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজে অধ্যায়নকালীন সময়ে আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে ৪০০ মিটার ও পোলভল্টে প্রথম স্থান লাভ করেন এবং একই বছর অনুষ্ঠিত আন্তঃকলেজ টুর্নামেন্টে জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের সম্মাননা লাভ করেন।
১৯৭৭ ও ৭৮’ সালে খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত খুলনা জেলার সকল ক্লাবের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে পোলভল্ট ইভেন্টে প্রথম স্থান লাভ করেন এবং জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পানি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পোলভল্টে প্রথম স্থান এবং ১৯৯৩ সালে বিজেএমসি’র জোনাল পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।
অ্যাথলেটিক্সের পাশাপাশি ফুটবলেও তার সুনাম খ্যাতি এবং যশ ছিল। ১৯৭৫ সালে ঐতিহ্যবাহী দিঘলিয়া ওয়াইএমএ ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবে খুলনা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে অভিষেক ঘটান। টানা সাত বছর ৮১’ সাল পর্যন্ত ওই ক্লাবের স্ট্রাইকার এবং মংলা বন্দর টিমের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার হিসেবে দশ বছর, এক বছর করে খুলনা কালেক্টর ক্লাব, এবং খুলনা আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলে খুলনা জেলা স্টেডিয়াম মাতিয়েছেন। তার ক্রীড়া নৈপুণ্য এবং পায়ের জাদুকরী খেলা খুলনা স্টেডিয়ামের দর্শকরা উপভোগ করেছেন।
খুলনা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ ছাড়াও এক যুগ ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে বিভিন্ন ক্লাবের স্ট্রাইকার হিসেবে ঢাকার মাঠ কাঁপিয়েছেন দাপটের সাথে।
রহমতগঞ্জ এবং এমএফএস ক্লাবের হয়ে খেলেছেন চার বছর, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলেছেন দুই বছর, ফরাজগঞ্জ ক্লাবে খেলেছেন ৪ বছর, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে এক বছর, পিডব্লিউডি ক্লাবে এক বছর সর্বমোট ১২ বছর ক্লাবগুলোর নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। এছাড়াও তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। খেলার পাশাপাশি তিনি ওয়াইএমএ ক্লাব ও মংলা বন্দর ফুটবল টিমের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
টিপু সুলতানের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামে। পিতার নাম মরহুম মোল্লা সোলায়মান হোসেন। মংলা বন্দরে তথ্য সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে ৩০ বছর চাকুরি করেছেন। ২০২০ সালে অবসরে যান।
এলাকার সাবেক কৃতি ফুটবলারদের নিয়ে গঠন করেছেন সোনালী অতীত ক্লাব। ওই ক্লাবের সভাপতি তিনি।
টিপু সুলতান খুলনা গেজেটকে বলেন, আমি দিঘলিয়ার সন্তান। একসময় দিঘলিয়ায় ফুটবলে খুব জৌলুস। সেই জৌলুস ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা একটি ফুটবল একাডেমি তৈরি করেছি। এটার নাম হচ্ছে সোনালী অতীত ক্লাব ফুটবল একাডেমি। ইতিমধ্যে দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাচ্চাদের নিয়ে আমরা একটা ফুটবল ক্যাম্প শুরু করেছি। এই ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদেরকে ভালো মানের প্লেয়ার তৈরি করার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এছাড়া অনেক সময় দেখা যাচ্ছে ছেলেপেলেরা মোবাইল ও মাদকের আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদেরকে ওই জায়গা থেকে দূরে রাখার জন্য পড়াশুনার পাশাপাশি ভালো মানের ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
খুলনা গেজেট/এনএম