খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫
  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতায় কুয়েটে গ্রীনওয়াচম্যান

একরামুল হোসেন লিপু

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। বিশ্ববিদ্যালয়টির গুনগত মান, এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, গবেষণাধর্মী কার্যক্রম খুবই প্রশংসনীয়। ১১৭ দশমিক ৩৫ একর জায়গা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিস্তৃতি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর পাশাপাশি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, চারপাশে সবুজের সমারোহ গ্রীন ক্যাম্পাস, ক্যাম্পাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা (ক্লিন ক্যাম্পাস) বিশ্ববিদ্যালয়ে আগতদের মুগ্ধ করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে রয়েছে অসংখ্য গাছপালা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৭ সহস্রাধিক।

কুয়েটের প্রধান ফটক পেরিয়ে সামনে ক্যাম্পাসের দিকে এগোলে চোখে পড়বে কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া প্রশস্ত সড়ক। সড়কটি ধরে যতই সামনে এগোবেন ক্যাম্পাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা (ক্লিন ক্যাম্পাস) আপনাকে বিমোহিত করবে। ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রয়েছে নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট। প্লান্টের আওতায় রয়েছে ১০/১২ জন ক্লিনার। ক্যাম্পাসে ৩৫টির অধিক স্থানে রয়েছে ময়লা ফেলার ডাস্টবিন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ক্যাম্পাস ক্লিন রাখায় নিবিড় ভাবে কাজ করার জন্য ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মীকে “গ্রীন ওয়াচম্যান” উপাধি দেন। গ্রীন ওয়াচম্যানকে দেওয়া হয় একটি বাইসাইকেল। যিনি ভ্রাম্যমান পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিকভাবে যে কারোর ফেলানো ময়লাগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো নির্দিষ্ট ময়না ফেলার স্থানে ডাম্পিং করবে। বাইসাইকেলের পিছনে ছোট ডাস্টবিনের বাস্কেট লাগিয়ে ক্লিন ক্যাম্পাস তৈরিতে গত ৮ বছর থেকে নিরলসভাবে কাজ করছেন গ্রীন ওয়াচম্যান মোঃ আলামিন।

গ্রীন ওয়াচম্যান উপাধি পাওয়া মোঃ আলামিন খুলনা গেজেটকে বলেন, কুয়েটের অন্যান্য পরিচ্ছন্ন কর্মীর মতো গ্রীন ওয়াচম্যান হিসেবে ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে আমি গত ৮ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শুধু পেশাগত দায়িত্ব নয় কাজটি আমি আন্তরিকতার সাথে করে থাকি। আমার কাজ হচ্ছে ক্যাম্পাসে ময়লা না ফেলানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী, আগতদের সচেতন করা। যদি কোন ছাত্র-ছাত্রী ভুলক্রমে কোন ময়লা যেমন ধরুন টিপসের প্যাকেট ফেলে, সেটা আমি নিষেধ করি এবং ওই ময়লাটা নিয়ে আমি আমার সাইকেলে থাকা ডাস্টবিনের বক্সে রাখি। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কম্পাসের ভীতর চক্কর দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফেলানো ময়লাগুলো সংগ্রহ করে ক্যাম্পাসের ময়লা ফেলানো বড় ডাস্টবিনে ডাম্পিং করি।

গ্রীন ওয়াচম্যান আলামিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহান্মদ আলমগীর স্যারের মাথা থেকে ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখার “গ্রীন ওয়াচম্যান” ধারণাটা আসে। গ্রীন ওয়াচম্যান অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থাকলে সে সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসও আমাদের কুয়েটের মত পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব। গ্রীন ওয়াচম্যান আলামিন আরো বলেন, কুয়েটের ৯০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী ক্যাম্পাসে ময়লা ফেলানোর ব্যাপারে খুবই সচেতন। বাইরে থেকে যারা দর্শনার্থী আছে তারাই সাধারণত ময়লা ফেলে। অনেক সময় ৪/৫ জন ছাত্র সড়ক দিয়ে কথা বলতে বলতে ভুলবশতঃ চিপসের প্যাকেট কিংবা অন্য কিছু ফেলার সময় আমার নজরে পড়লে আমি তাদেরকে বলি মামা এটা ফেলা যাবে না। এভাবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে দায়িত্ব পালন করে থাকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টের তত্ত্বাবধায়ক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোঃ সাদেক হোসেন প্রামানিক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ১০/১২ জন ক্লিনার রয়েছে । প্রতিদিন সকাল ৯ টার মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টের চুল্লিতে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। আবার দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা এবং হলগুলো থেকে পচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করে নিজস্ব প্লান্টে সেগুলো ডাম্বিং করা হয়। ১৫ দিন পরপর এ গুলো রিসাইকেলিং করে জৈব সার তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত ময়লা মাসে একবার সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলা গাড়ি এসে নিয়ে যায়। ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতায় একজন গ্রীনওয়াচম্যান রয়েছে। বাকি ক্লিনার যাদেরকে বলা হয় ড্রাই ক্লিনার এরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় নিরলসভাবে কাজ করে থাকে।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!