খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ১০ মার্চ, ২০২৫

Breaking News

  ধর্ষণের মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আইন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা
  কোনো বাধা ছাড়া মাগুরায় শিশু ধর্ষণ মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ হাইকোর্টের, শিশুটির বড়বোনকেও নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ

কোন পথে এগোচ্ছে স্টার্মার-ট্রাম্প সম্পর্ক?

মূল: মার্টিন কেটল; ভাষান্তর: রুশাইদ আহমেদ

সংকটের সময়কেও কিয়ের স্টার্মার তাঁর ভালো মুহূর্তে পরিণত করেছেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমে অভ্যন্তরীণ এবং চলতি বছরে তিনি আন্তর্জাতিক এই দুই সংকটের মুখোমুখি হলেন। প্রথম ক্ষেত্রে অর্থাৎ সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ডের জেরে সৃষ্ট দাঙ্গায় তাঁর পদক্ষেপ ছিল চিত্তাকর্ষক ও কার্যকর।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রটা হলো ট্রাম্পের ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করা। আর এই দুই ক্ষেত্রেই স্টার্মারকে সঠিক সময়ে সঠিক স্থানের সঠিক ব্যক্তি বলে মনে হয়েছে।

বুধবার হাউজ অব কমন্সে স্টারমারের এই দক্ষতার আরেকটি উদাহরণ দৃশ্যমান হয়, যখন তিনি ২০০৭ ও ২০১২ সালে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধ করা মোট ৬৪২ জন প্রাণ হারানো ব্রিটিশ সেনার মৃত্যুবার্ষিকীর কথা স্মরণ করার সময় বলেছিলেন, তাদের সবসময় মনে রাখা হবে।

তবে তিনি জেডি ভ্যান্সের নাম উল্লেখ করেননি। এই সপ্তাহে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের অবজ্ঞাসূচক “কোনো এক দেশ” ধরনের মন্তব্যের প্রসঙ্গেও কথা তোলেননি। যা স্টার্মারের তিরস্কার করার বিষয়টিকে অকপটভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

সংকট মোকাবিলায় স্টার্মারের দক্ষতা সাধারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার নেতৃত্বের সঙ্গে একটি অপ্রত্যাশিত বৈপরীত্যের সৃষ্টি করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে স্টার্মারের শান্ত, পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল কেবল লেবার পার্টির নির্বাচনী জনপ্রিয়তাই অনেকাংশে নষ্ট করেনি, বরং তাঁকেও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল প্রতিপন্ন করেছে।

তবে এই কৌশল ইউক্রেন ইস্যুর মতো তীব্র সংকটের ক্ষেত্রে অবলম্বন করায়, তা অত্যন্ত কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও বাড়াবে। এই দৃশ্য কোভিডের শুরুতে বরিস জনসনের প্রতি সমর্থন জোটানোর প্রতিচ্ছবির সঙ্গে মিলে যায়। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, সেই ঘটনার পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল।

বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সংকট মোকাবিলায় ব্রিটিশ নেতারা সাধারণত ১৯৪০ সালের উইনস্টন চার্চিলকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাই মার্গারেট থ্যাচার ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় নিজেকে যেভাবে আবিষ্কার করেছিলেন, একইভাবে টনি ব্লেয়ারও ৯/১১ এবং ইরাক যুদ্ধের পর একই ধারা অনুসরণ করেছিলেন। রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে, তখন বরিস জনসনও নিজেকে চার্চিল হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। স্টার্মারের শান্ত ও সংযত দৃষ্টিভঙ্গি চার্চিলের চেয়ে বরং ক্লেমেন্ট অ্যাটলির কথা বেশি মনে করিয়ে দেয়। এ কারণে সবদিক থেকেই তিনি “ট্রাম্পবিরোধী” হয়ে উঠেছেন।

তবে স্টার্মারের শান্ত থাকার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নেই। কেননা ২০২৪ সালের বিশ্ব বর্তমানে বদলে গেছে। উত্তর আটলান্টিক জোটে দুটি যুগান্তকারী বিষয়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এক অভূতপূর্ব সংকট তৈরি করেছেন ট্রাম্প। প্রথমত, রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্ত এখন থেকে ইউক্রেন, পোল্যান্ড, নাকি জার্মানির সঙ্গে থাকবে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বিতীয়ত, ইউরোপের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ভূমিকা গ্রহণ করবে কি-না তা-ও স্পষ্ট নয়। এই প্রশ্নগুলো মোটেও ছোট নয়।

স্টার্মার ট্রাম্পের মোকাবিলায় কিছু স্তরে কাজ করতে পারেন, তাৎক্ষণিকভাবে কিংবা আগামী চার বছর ধরে। এই প্রতিটি কৌশল সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বর্তমান সংকটের গভীরতা স্বীকার করে। এগুলো ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলোর অগ্রহণযোগ্যতা এবং বিকল্প তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তবে একই সঙ্গে, প্রতিটি কৌশলই যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রুতে পরিণত না করার দৃঢ় সংকল্পের ওপরও নির্ভরশীল।

ট্রাম্প প্রশাসনের সহযোগিতা ও ব্রিটিশ জনসমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আগামী চার বছর হয়তো স্টার্মারকে একের পর এক সংকট সামলানোর মধ্য দিয়েই কাটাতে হবে। এসব সংকট ইউক্রেনের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য থেকে শুরু করে ন্যাটো, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক এবং চলতি সপ্তাহের বক্তব্য, কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের ইস্যু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

এ ছাড়া, ফ্রিডরিখ মের্জ এবং ২০২৭ সালের ম্যাক্রোঁর উত্তরসূরি কে হবেন— তার ওপরও নির্ভর করবে অনেক কিছু। একইভাবে স্টার্মার ও তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জোনাথন পাওয়েল ট্রাম্পের পরবর্তী উত্তরসূরি হওয়ার দৌঁড়ে থাকা প্রার্থীদের ওপরও গভীর নজর রাখবেন পর্দার আড়ালে— এ কথা বলার আর কোনো অপেক্ষা রাখে না।

• মার্টিন কেটল, দ্য গার্ডিয়ানের সহযোগী সম্পাদক
• দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে ভাষান্তর করেছেন রুশাইদ আহমেদ

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!