খান আব্দুর রশিদের বয়স তখন ২৭, টকবগে যুবক। মাষ্টার্স সম্পন্ন করে সবেমাত্র বাড়ির পাশে গ্রামের স্কুল দিঘলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। এর কিছুদিন পর ১৯৭১ সালে শুরু হয় বাঙ্গালীর স্বাধীকার আন্দোলন মহান মুক্তিযুদ্ধ।
খান আব্দুর রশিদ তখন সিদ্ধান্ত নিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের। এ লক্ষে তিনি এলাকার অনেককে সংগঠিত করে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জয়নুল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার সন্ধায় এক আলাপচারিতায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধকালীন সময়ের অনেক স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস-২ ওয়াহিদা আক্তারের পিতা মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজীর আহন্মেদ এর সেনহাটি বাসভবনে বসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রম পরিচালনা করতাম। ’৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকটি অপারেশনের স্মৃতিচারণ করেন তিনি। রেডিও পাকিস্তানের খুলনা কেন্দ্র গল্লামারি অপারেশনের একটি স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার উষালগ্নে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে আমরা ১০ থেকে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা রেডিও সেন্টারের পাশ্ববর্তী তৎকালীন একটি খালের ভিতর দিয়ে খুলনা কেন্দ্রে আক্রমন করি। আমাদের আক্রমণে ভীত হয়ে কেন্দ্রে পাহারারত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেদিন পালিয়ে যায়”
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ৯ নং সেক্টরের সেক্টর এ্যাডজুটেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে প্রফেসর খান আব্দুর রশিদ দিঘলিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্বে। দিঘলিয়া উপজেলায় মোট ৮৬ জন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে সম্প্রতি কয়েকজনের নাম বাতিলের সংবাদে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।
৭৭ বছর বয়েসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জীবনে অনেক সম্মান, শ্রদ্ধা এবং মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা, আমাদের সবার আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমাদের যে সম্মান, মর্যাদা এবং মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেছেন এরপর আমাদের আর আক্ষেপের কিছু নাই।”
ব্যক্তিগত জীবনে প্রফেসর খান আব্দুর রশিদ ২ কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রীসহ বসবাস করছেন দৌলতপুর পাবলায় নিজ বাড়িতে। বড় মেয়ে মৌসুমী ইয়াসমিন পলি স্বামীর সংগে বসবাস করেন আমেরিকার বোস্টন শহরে, ছোট মেয়ে ফারহানা ইয়াসমিন সুইটি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে সরকারী হাসপাতালে চাকুরী করছেন।
খুলনা গেজেট / এমএম