খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

কে হ‌চ্ছেন সাতক্ষীরার পৌর পিতা?

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত চতুর্থ ধাপে পৌর নির্বাচনের তফশীল অনুযায়ী আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে গত ১৭ জানুয়ারি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মোট পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু কে হবেন পৌর পিতা তা নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা।

বিগত পাঁচ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় নাকাল ছিল পৌরবাসী। শহরের নিম্মাঞ্চলের মানুষকে প্রায় ছয়মাস ধরে হাটু পানি ভেঙ্গে চলাচল করতে হয়েছে। শহরের অধিকাংশ রাস্তা ছিল চলাচলের একেবারেই অনুপযোগি। যদিও তফশীল ঘোষণার আগ মুহুর্তে পৌরসভার কিছু রাস্তার সংষ্কারের কাজ উদ্বোধন করেছেন মেয়র ও কাউন্সিলররা। পৌর সভার নিম্মাঞ্চলে বছর জুড়ে ছিল সুপেয় পানির তীব্র সংকট। সুপেয় পানি ও জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগি পৌরবাসি।

তাই এবারের সাধারণ জনগণ পৌরসভার উন্নয়ন চায়। তারা চায় না জলাবদ্ধতা, চায় না হাঁটু পানিতে চলতে ফিরতে। ড্রেনের দূষিত ময়লা-আবর্জনা রাস্তার উপরে এবং বাড়ির উঠানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে এটাও তারা চায় না। সুপেয় পানির জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন আর করতে চায় না। তারা চায়, নাগরিক সেবা সমূহের সঠিক অধিকার। এখনই সুযোগ, সময় এসেছে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার। কে নাগরিকদের সঠিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবে সেটি নির্ধারণ করবে সাতক্ষীরা পৌরবাসী।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন পৌর আ’লীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক। তার বাবা শেখ আশরাফুল হক সাতক্ষীরা পৌরসভায় আ’লীগের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। মেয়রও তিনি প্রথম। পরপর দুইবার তিনি নির্বাচিত হন নিরপেক্ষ ভোটে। এর আগে বা পরে আওয়ামী লীগ ঘরণার কেউ নির্বাচিত হতে পারেননি সাতক্ষীরা পৌরসভায়। আওয়ামী লীগসহ মহাজোটভুক্ত দলের আর কোন প্রার্থী নেই এবার।

অপরদিকে বিরোধী পক্ষের প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। প্রার্থীরা হলেন বিএনপি মনোনীত বর্তমান মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মোঃ নুরুল হুদা ও সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু এবং ইসলামী আন্দোলনের ডা. এসএম মুসতাফীজ উর রউফ।

বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ৭৯ হাজার ৬ হাজার ৩৪ জন ভোটারের মধ্যে ৫১ হাজার ৬২০ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতীক) তাজকিন আহমেদ চিশতি ১৬ হাজার ৪৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী মোঃ আজহার হোসেন পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৮৭৩ ভোট। এছাড়া সতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু ১২ হাজার ৫৩২ ভোট পেয়ে ৩য় অবস্থানে ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) নিয়ে মোঃ সাহাদাৎ হোসেন ৯ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন। এবার ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ৮৯ হাজার ২২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ জন।

বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতি বিজয়ী হয়েছিলেন এবং ৫ বছর সাতক্ষীরা পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছেন। এবারও বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। বিগত ৫ বছরে জনসাধারণের সাথে সম্পর্কের উপর নির্ভর করছে তার এবারের সফলতা।

এদিকে আ’লীগের প্রার্থী শেখ নাসেরুল হক সৎ এবং নিষ্ঠাবান হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিত। একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক। সাবেক মেয়রের ছেলে হিসাবে পৌরসভায় তার বেশ পরিচিতিও রয়েছে। তাছাড়া শেখ নাসেরুল হক ব্যক্তিগতভাবে ক্লিন ইমেজের মানুষ। কোন বদনাম নেই তার। সরকারের শরিক জাতীয় পাটির ভোটের বড় অংশটাই নৌকায় যেতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। তবে যেগুলো নৌকায় যাবে না সেগুলো বাকি চার প্রার্থীর প্রতীকে ভাগ হতে পারে। সবমিলিয়ে নৌকার অবস্থান এবার অনেক শক্ত হবে মনে করেন অনেকে।

বিগত ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী তাসকিন আহমেদ চিশতি বিজয়ী হন। এবার তার সম্বল মানুষের সাথে সদালাপ। পৌরসভায় গেলেই মিস্টিমুখের কথা ভোলেননি কেউ। যদিও আশানুরূপ উন্নয়ন করতে পারেন নি সরকার বিরোধী মেয়র হওয়ায় বলে মনে করেন অনেকে। তাছাড়া সরকারী দলের যাদের ঘিরে তিনি নির্বিঘ্ন থেকেছিলেন গত ৫ বছর তাদের কর্মকান্ডের দায়ভার তাকে বহন করতে হচ্ছে। এরপরও বেশ সুবিধাজনক স্থানে থেকেও জামায়াত পৃথক প্রার্থী দেওয়ায় হিসাবটা গোলমেলে হয়ে গেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসিম ফারুক খান মিঠু গত নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতির থেকে ৩ হাজার ৯শ ৩৮ ভোটের ব্যবধানে ৩য় অবস্থানে ছিলেন। ভোটের পর থেকে বসে ছিলেন না। এলাকায় এলাকায় গেছেন সবসময়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক সাহায্য সহায়তা করেছেন। যুব সমাজের মধ্যে তার নিজস্ব একটা বলয় রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতা হিসেবেও তিনি অনেকেরই আস্তাভাজন। তাছাড়া রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অপশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতির চেয়ারে বসে আছেন। ফলে তাকে কেউ ছোট করে দেখছেন না।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুরুল হুদা। ২০১৩ সালে সাতক্ষীরা জেলায় নজিরবিহীন সহিংসতার পর অনেকে জামায়াতের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে বলে মনে করলেও এবারের পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। তাদের ভোট ব্যাঙ্ক অক্ষত রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এমনকি নারীদের মধ্যে তাদের ভোট বেড়েছে বলেও অনেকের ধারণা। তাদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে, নাকি ভালো হয়েছে সে প্রমান পাওয়া যাবে এই নির্বাচনে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. এসএম মুসতাফীজ উর রউফ। দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে তিনি লড়ছেন সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে। ধীর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। ভোটও বাড়ছে বলে মনে করেন অনেকে। কতটা বেড়েছে সেই পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৪ ফেব্র“য়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!