খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ
  ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে : চিফ প্রসিকিউটর
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনের শুনানি চলছে
  শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ করা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

কে এই জওয়াহিরি, যার মাথার দাম ছিল আড়াই কোটি ডলার!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ওসামা বিন লাদেনের পর ৯/১১ হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তথা আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জওয়াহিরিকে হত্যা করল আমেরিকা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আমেরিকান বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন জওয়াহিরি। এ খবর টুইট করে জানিয়েছেন খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমেরিকার সেনার এক সূত্র জানিয়েছেন, সকাল ৬টা ১৮ মিনিটে কাবুলে আমেরিকার হামলায় মৃত্যু হয়েছে জওয়াহিরির।

সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, কাবুলে একটি ‘নিরাপদ বাড়ি’র ব্যালকনিতে হত্যা করা হয়েছে জওয়াহিরিকে। তবে এই হামলায় অন্য কেউ হতাহত হননি বলেও দাবি করা হয়েছে।

টুইটবার্তায় বাইডেন লিখেছেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের থেকে আমেরিকার মানুষকে রক্ষা করার সঙ্কল্প ও ক্ষমতা প্রদর্শন জারি রেখেছে আমেরিকা।’ অন্য একটি টুইটে বাইডেন লেখেন, ‘ন্যায়বিচার দেওয়া গেল।’

আল কায়দায় কী ভাবে অভিষেক ঘটল জওয়াহিরির? শল্য চিকিৎসক থেকে কী ভাবে বিশ্বের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি তালিকায় নাম উঠল তাঁর?

১৯৫১ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোয় এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে জন্ম জওয়াহিরির। ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ আল আজহারের প্রধান ইমামের পৌত্র ছিলেন তিনি। জওয়াহিরির যখন ১৫ বছর বয়স, তখন প্রথম তিনি ইসলামি দীক্ষা গ্রহণ করেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনে পড়াশোনা করেছিলেন জওয়াহিরি। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন। ১৯৭৪ সালে স্নাতক হন তিনি।

তাঁর সহপাঠীদের অনেকেই পরে জানিয়েছিলেন যে, তরুণ বয়সে প্রাণবন্ত ছিলেন জওয়াহিরি। সে সময় সিনেমা দেখতেন, গান শুনতেন, বন্ধুদের সঙ্গে মস্করা করতেন তিনি।

মিশরের সেনাবাহিনীতে শল্য চিকিৎসক হিসাবে তিন বছর কাজ করেছিলেন জওয়াহিরি। পরে মাদি এলাকায় নিজের ক্লিনিক খোলেন। ১৯৭৮ সালে শল্য চিকিৎসায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

১৯৮১ সালে জওয়াহিরি সম্পর্কে প্রথম শিহরিত হয়েছিল বিশ্ব। মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাতের হত্যা- পরবর্তী ঘটনায় যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন জওয়াহিরি। তাঁর আইনজীবী দাবি করেছিলেন, সেই সময়ে জেলের মধ্যে জওয়াহিরির উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছিল। এরপর থেকেই একের পর এক হামলার ঘটনায় নাম জড়ায় তাঁর। বেআইনিভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে তিন বছর জেল হয় জওয়াহিরির।

জওয়াহিরির ছদ্মনাম ছিল ‘ডাক্তার’। মুক্তি পেয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত আফগানিস্তানে জখম ইসলামি মুজাহিদিন গেরিলাদের চিকিৎসার জন্য ‘রেড ক্রিসেন্টে’র সঙ্গে কাজ করেছিলেন জওয়াহিরি।

১৯৮৫ সালে হজ করতে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছিলেন জওয়াহিরি। পরের বছর জেদ্দায় ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। পরবর্তী সময়ে লাদেনের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ও চিকিৎসক ছিলেন তিনি। মুসলিম ব্রাদারগুড সংগঠনের হাত ধরে আল কায়দায় যোগ দিয়েছিলেন জওহাহিরি।

১৯৯৩ সালে মিশরে জেহাদের নামে জঙ্গিদের নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন জওয়াহিরি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সে দেশে সরকার ফেলে ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করার কর্মসূচির পুরোধা ছিলেন তিনি।

১৯৯৫ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তারপরই জঙ্গিদের ধরপাকড় শুরু করেন মিশর কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৯ সালে জওয়াহিরিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজার নির্দেশ দেয় মিশরের সামরিক আদালত। তবে তাঁকে ধরা যায়নি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় জঙ্গি হামলায় লাদেনের পাশাপাশি অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। এর পর বহু বছর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকায় তিনি গা-ঢাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিল বিভিন্ন মহল।

২০১১ সালে আমেরিকার হানায় লাদেনের হত্যার পর আল কায়দার রাশ যায় জওয়াহিরির হাতে। সে সময় থেকে আবারও চর্চায় উঠে আসে তাঁর নাম।

লাদেনের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পশ্চিমী দেশে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন তিনি। তাঁর মাথার দাম ধরা হয়েছিল আড়াই কোটি ডলার।

চার বার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন জওয়াহিরি। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে আমেরিকার বিমানহানায় পুত্র মহম্মদ ও কন্যা আয়েশার মৃত্যু হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!