খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ আট কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির
  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

কেশবপুর দুধের বাজার  সিন্ডিকেট  ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি

কেশবপুর প্রতিনিধি

কেশবপুর উপজেলা ও পৌরসভার দুধের বাজারে খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতারা শহরে ৪ সিন্ডিকেট দুধ ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতা সাধারণেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কেশবপুর পৌরসভার পুরাতন গরুর হাটে দুধের বাজার সরেজমিন পরিদর্শন কালে দেখা গেছে  দুধের বাজারে হরেক চিত্র। পৌরসভার খুচরা ও পাইকারি দুধের বাজার একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা খেতেল ও গ্রাম্য হাট-বাজার থেকে আসা দুধ ব্যবসায়ীর দুধ ওই ৪ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করতে বাধ্য। ওই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতার নিকট হতে অল্প দামে ক্রয় করে খুচরা ক্রেতার নিকট ইচ্ছামত বেশি দামে বিক্রি করে চলেছে। আগে খুচরা বিক্রেতারা বাজারে বসে দুধ বিক্রি করতে পারতো। আর এখন তাদের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর নিকটে বিক্রি করতে হয়।

বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিক্রি করতে আসা দুধ বিক্রেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- আমরা কেশবপুর বাজারে দুধ বিক্রি করতে নিয়ে আসলে বাধ্যতামূলক সিন্ডিকেট ৪ জন ব্যবসায়ীর কাছে অল্প দামে বিক্রি করতে হয়। আর তারা ইচ্ছেমত দুধের দাম দিয়ে থাকে।

দুধের বাজারে সিন্ডিকেট ব্যাবসায়ীরা হচ্ছে পৌরসভার বায়সা গ্রামের দুলাল চন্দ্র ঘোষ, মধ্যকুল গ্রামের আব্দুস সবুর, হাবাসপোল এলাকার বিধবা সেলিনা বেগম ও মূলগ্রামের ভোদি বিবি।

আলাপ হলো কেশবপুর পৌর শহরের দুধ ব্যবসায়ী আব্দুস সবুরের সাথে। তিনি জানান প্রতিদিন বাজারে ১০/১২ মন দুধ বেচা-বিক্রি হয়ে থাকে। আর এই সকল দুধ বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার নিকট হতে ক্রয় করে আমরা শিশু খাদ্য হিসাবে হোম ডেলিভারী করে থাকি। এছাড়াও যশোর ও মণিরামপুর হতে পাইকারি দুধ ব্যবসায়ীরাও এসে থাকে। তিনি প্রতিদিন সাড়ে ৪ থেকে ৫ মন দুধ বিক্রি করে থাকেন।

সিন্ডিকেট দুধ ব্যবসায়ী বিধবা সেলিনা বেগম বলেন গ্রাম থেকে বিক্রি করতে নিয়ে আসা দুধ কিনে শহরের বাসাবাড়িতে গিয়ে প্রতিদিন ২৫/৩০ কেজি দুধ বিক্রি করে থাকি। আর এই করে আমার সংসার চালাতে হয়।

গ্রাম থেকে দুধ বিক্রি করতে আসা খুচরা বিক্রেতা ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের আলতাফ হোসেন ও রহিম বক্স দফাদার জানান, আগে নিজেরাই বিক্রি করতে পারতাম আর এখন তারা ওই ৪ জন ব্যবসায়ীর নিকট অল্প মূল্যে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হয়ে থাকে। তারা আমাদের কাছ থেকে ৩৫/৪০ টাকা কেজি দরে দুধ কিনে ৭৫/৮০/৯০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করে থাকে। আবার সনাতন ধর্মালম্বীদের একাদশী বা ধর্মীয় বিশেষ দিনে ইচ্ছা মতো বেশি দামে দুধ বিক্রি করে থাকে। মোটকথা দুধের বাজারে বেচাকেনা ওই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর নিকট জিম্মি হয়ে পড়েছে।

শহরের এক দুধ ক্রেতা কোহিনূর পারভীন জানালেন, তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) গ্রাম থেকে বিক্রি করতে নিয়ে আসা এক ব্যক্তির নিকট থেকে ২ কেজি দুধ ৫০ টাকা কেজি দরে ১শ টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। অথচ এই দুধ বাজার থেকে কিনতে হলে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে কিনতে হতো। শহরের দিলীপ কুমার মদক বলেন, দুধের বাজার ৪ জন ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা ৪০ টাকায় কিনে ৭০/৮০ টাকায় বিক্রি করে ক্রেতাদের রীতিমত প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে থাকে। পাঁচবাকাবর্শি গ্রামের আব্দুল করিম দফাদার জানান, এখন আর আগের মত যার তার নিকট হতে দুধ কেনা যায়না। দুধ কিনতে আসলেই তাদের নিকট থেকে বাধ্যতামূলক বেশি দামে কিনতে হয়। তাছাড়াও দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করা একেবারে স্বাভাবিক ব্যাপার। বাজারে হাতের কাছে টিউবয়েলও বসানো রয়েছে যে দুধে ইচ্ছামত পানি দিতে পারে। তাদের দুধ কখনও ফুরায় না। এই মুহূর্তে দুধের বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে না পারলে আসন্ন রমজান মাসে ক্রেতা সাধারণরা দারুণ ভাবে প্রতারিত হবে।

নিয়মিত দুধ ক্রেতা শহরের মনোরজ্ঞন দে বলেন, বাজারে দুধে পানি মিশানো বাদে কোন খাঁটি দুধ পাওয়া যাবে না। ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতার নিকট হতে দুধ কেনার পর হাতে থাকা জগ ধোঁয়া পানি হরহামেশাই ব্যবসায়ীদের রাখা কলসে ঢেলে দিয়ে থাকে। কি করার আছে দুধ খেতে হলে তাদের নিকট থেকে যা পাই তাই কিনতে হয়।

কেশবপুর পৌরসভার সেনেট্যারী ইন্সপেক্টর সুজয় কুমার বিশ্বাস বলেন, কেশবপুর দুধের বাজারে ভেজাল দুধ বিক্রি করার কোন অবকাশ নেই। তবে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

 

খুলনা গেজেট/কেএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!