খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

কেমন কাটলো খুলনার ক্রীড়াঙ্গনের তারকাদের ঈদ

আল মামুন

করোনার সময়ে আরও একটি ঈদ পার হলো। অন্যান্য সেক্টরের মতো খুব ভালো সময় কাটছে না ক্রীড়াঙ্গনেও। খুলনার ক্রীড়াঙ্গনে বেশ কয়েকজন তারকা আছেন যারা বাংলাদেশকে নানা ভাবে আলোকিত করছেন। করোনা এই সময়ে তাদের ঈদটা কেমন কাটলো। পাঠকদের জন্য আমাদের এ আয়োজন..

রোমান সানা : দেশসেরা আর্চার। গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে অবস্থান করছেন খুলনার টুটপাড়া তালতলা হাসপাতাল রোডের  বাসায়। রোমান সানার জন্য এবারের ঈদটা ছিলো অন্যরকম আনন্দের। গত ১০ বছরে কখনও কোরবানির ঈদ বাসায় করা হয়নি রোমান সানার। এবার নিজে কোরবানি দিয়েছে, নিজে গরু কেটেছেন মাংস বিলিয়েছেন। এটা করতে পেরেই মধ্যে বেশী দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত এই তারকার। নিজের বর্ণনায় রোমান জানান, আমার বাসার পাশে বাইতুল মামুর জামে মসজিদে নামাজ পড়েছি। এরপর বাসায় এসে অন্য ভাইদের সাথে নিয়ে গরু জবাইয়ের পর নিজেই মাংস কেটেছি, বিলিয়েছি। এটা আসলে আমার জন্য অন্য রকম একটা পাওয়া। যদিও সময়টা ভালো যাচ্ছে না আমাদের জন্য। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, এ কারণে হলেও আমি পরিবারের সাথে ভালো একটা সময় পার করতে পেরেছি।

রোমান সানার আরেকটি আনন্দ তার মাকে নিয়ে। দীর্ঘ এই সময় বাসায় থাকার কারণেই মায়ের চিকিৎসা করাতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আমাকে হয়তো আল্লাহ একটা সুযোগ তৈরী করে দিয়েছিলেন, এতটা সময় বাসায় না থাকলে হয়তো মায়ের চিকিৎসাটা করানো হতো না। মা বেশ কিছু রোগে ভুগছিলেন। আল্লাহর রহমতে তিনি এখন অনেকটাই ভালো আছেন।

নুরুল হাসান সোহান : অন্যান্য ঈদের থেকে সোহানের জন্য এই ঈদটা আলাদা। জাতীয় পর্যায়ের উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান যদিও নিজের বাসার পাশে দৌলতপুর মহেশ^রপাশা মসজিদে নামাজ পড়ে দিন শুরু হয়েছিলো তার। এরপর গরু কোরবানি দিয়েছেন। পরিবারের সবার সাথে সময় কাটিয়েছেন। তবে করোনার কারণে ঈদের আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছেন না সোহান। আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘অন্যান্য ঈদে আমাদের বাসায় ফুফুরা আসতেন, কাজিনরা সবাই আসতেন, গত দুই ঈদে তারা আসছেন না। আমরাও পরিবার নিয়ে কোথাও যেতে পারছি না। তবে সারাদিন পরিবারের সাথে সময় কাটিয়েছে এটাও আনন্দের। ’’ খুব শীঘ্রই করোনার প্রকোপ থেমে যাবে এমনটা প্রত্যাশা করেন এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান।

মেহেদী হাসান : জাতীয় দলের তরুণ অফ স্পিন অল রাউন্ডার মেহেদী হাসান বিয়ে করেছেন ঈদের কয়েকদিন আগেই। প্রথমবারের মতো বিবাহিত জীবনে ঈদ পেয়েছেন, নতুন এই জীবন ভালোই উপভোগ করছেন তিনি। পাশাপাশি অনেক দায়িত্বও বেড়েছে বলে মনে করেন তরুণ এই ক্রিকেটার। তবে গত ঈদের মতো এই ঈদটাও খুব বেশী ভালো কাটেনি করোনার কারণে।

মেহেদী এবার নিজেই গরু কোরবানি দিয়েছেন। সারাদিন সেই ব্যস্ততা কেটেছে তার। মুজগুন্নি বাসার পাশের মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে দিন শুরু করেন। এরপর বাসায় এসে গরু কোরবানি দিয়েছেন। নিজেই মাংস কেটেছেন। আশেপাশে সবাইকে বিলিয়েছেনও। বিয়ের পরে এখনও শশুরবাড়ি যাওয়া হয়নি মেহেদীর। মেহেদীর শশুর বাড়ি মাশরাফি বিন মুর্তজার শহর নড়াইলে। আগামীকাল (২ আগস্ট) সেখানে তার দাওয়াত। তার শশুর বাড়ির আত্মীয়রা তাকে এবং তার স্ত্রীকে নিতে আসবেন। তবে যাবেন কি না, এখনও নিশ্চিত না মেহেদী। বলেন, আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে কাল নিতে আসতিছে। বাসায় এত কাজ, যাবো কি না আমি শিওর না। তবে আবারও নতুন জীবনের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন মেহেদী। বলেন, আমি নতুন জীবনে সবাইকে পাশে পেতে চাই। সবার কাছে দোয়া চাই। আমি যেন আমার নতুন স্ত্রীকে নিয়ে সারাজীবন একসাথে ভালোভাবে পথ চলতে পারি।’’

সালমা খাতুন : জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের বাড়িও খুলনাতে। এই তারকা ক্রিকেটারের পুরো দিনটাই কেটেছে ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় ক্লান্তি নিয়ে বিশ্রামে গিয়েছেন। অন্য সবার মতো সালমারও পরিবারের সাথে পরপর দু’টো ঈদ করতে পেরে ভালো লেগেছে। তার ব্যস্ততম দিনটির বর্ণনা ছিলো এমনই, সকালে ঘুম থেকে উঠে আম্মুকে সালাম করেছি। আমাদের গরুটিকে গোসল করিয়েছে, সেখানে ছিলাম আমি। সবাই নামাজ পড়তে গিয়েছে, আমি অপেক্ষায় ছিলাম। এরপর হুজুর এসে গরু জবাই দিলেন, তারপর ব্যস্ততা বেড়ে গেলো। এর ফাঁকে মায়ের করা সেমাই খেয়েছি কয়েকবার। মাংস তৈরি করা, আত্মীয় ও গরীবদের মাঝে বিতরণ সবটাই নিজের হাতে করতে পেরেছি। আসলে একটা ভাইরাসের কারণে আমরা হয়তো ঘরবন্দী, কিন্তু আমরা যারা খেলার মানুষ তাদের দুইটা ঈদ পরিবারকে দিতে পারা নি:স্বন্তেহে খুবই ভালো লাগার বিষয়।’’

রুমানা আহমেদ : জাতীয় নারী দলের ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। তিনিও গত চার মাসেরও বেশী সময় ধরে খুলনার মুজগুন্নির বাসায় অবস্থান করছেন। এবার ঈদটা রুমানার জন্য মিশ্র অভিজ্ঞতা। অনেক সময় খেলার ব্যস্ততার জন্য পরিবারের সাথে ঈদ করা হয় না। পরিবারের সাথে ঈদ করতে পেরে ভালো লাগছে তার। নিজেই কোরবানি দিয়েছেন এটাও তার ভালো লাগার কারণ। তবে করোনার এই সময়ে সাধারণ মানুষ ভালো নেই এটা নিয়েই মূলত আক্ষেপ রুমানার। জানান, আমরা হয়তো ভালো আছি, কিন্তু সবাই কিন্তু ভালো নেই। তাদের জন্য দোয়া করছি। কোরবানি দিয়েছি। সেটা নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু আগের মতো সবাই একসাথে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে না, এটাকেও মিস করছি।

খুলনা গেজেট/এএমআর




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!