খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে
  চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১২
  নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে সব তৈরি পোশাক কারখানা, কাজে ফিরেছেন পোশাক শ্রমিকরা; শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার

কুরআন-হাদিসের আলোকে জ্বীন সম্পর্কে বিস্ময়কর ১০টি তথ্য

মুফতি সাআদ আহমাদ

জিন-পরি নিয়ে আছে হাজারো কৌতূহল। কেউ কেউ অতি আবেগে এ ব্যাপারে বিভিন্ন অবাস্তব ঘটনার অবতারণা ঘটায়। আবার কেউ পাণ্ডিত্য প্রদর্শনের উদ্দেশে এ বিষয়ে অনেক সত্যও অস্বীকার করে বসে। তবে এই লেখা থেকে জিনদের সম্পর্কে এমন ১০টি তথ্য পাওয়া যাবে, যা পবিত্র কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত।

সত্যি কি জিন-পরি বলতে কিছু নেই!

জিন-পরি বলতে কিছু নেই—এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা থেকে জিন সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ২৭)
এ ছাড়া ‘সুরা জিন’ নামের কোরআনে পাকের একটি স্বতন্ত্র সুরার নামকরণ হয়েছে। ছোট-বড় প্রায় ৫৭টি আয়াতে এ সম্পর্কিত বহু বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে, যা নিশ্চিতরূপে জিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে।

অভিশপ্ত শয়তান জিনের বংশোদ্ভূত

কোরআনের ভাষ্য মতে, ইবলিশ শয়তান আদম (আ.)-এর সামনে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল। তাই তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। সে ছিল জিনদের বংশোদ্ভূত। (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৫০)
এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় শয়তান শব্দ দ্বারা জিনদের কথা বোঝানো হয়েছে।

জিনের আকৃতি কেমন

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জিনের আকৃতিবিষয়ক যেসব বর্ণনা এসেছে, তা মৌলিকভাবে তিন প্রকার। দৃশ্যমান : অর্থাৎ জিনের প্রকৃত আকৃতি মানব চোখে অবলোকনযোগ্য। (তাবরানি : ৫৭৩) অদৃশ্যমান : অর্থাৎ জিনের আকৃতিবিহীন শুধু শারীরিক উপস্থিতি অনুভূত হওয়া। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩) বিকৃত আকৃতি : মানুষ, পশু-পাখি কিংবা বৃক্ষলতার আকৃতি ধারণ করা। (তাবরানি : ৪০১২)

জিনরা কী খায়

মানুষসহ অন্য প্রাণীরা যেমন খাওয়াদাওয়া করে, তদ্রূপ জিনরাও খাওয়াদাওয়াসহ অন্য প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করে থাকে। আল্লাহর নামে জবাইকৃত পশুর হাড়-হাড্ডিই হলো জিনের খাবার। একদা জিনের একটি দল নবীজি (সা.)-কে তাদের এলাকায় নিয়ে গেল। সেখানে নবীজি তাদের কোরআন তিলাওয়াত করে শোনালেন। অতঃপর তারা জিজ্ঞেস করল, আমাদের হালাল খাবার কী? নবীজি (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক ওই পশুর হাড়, যা আল্লাহর নামে জবাই করা হয় (সেগুলোই জিনদের খাবার)।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৫৮)

জিনদের বিয়েশাদি এবং সন্তান প্রজনন

মহান আল্লাহ নিজ প্রজ্ঞাগুণে প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তাই জিন জাতির মধ্যেও রয়েছে নর-নারীর জোড়া। মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে বিয়েশাদি ও বাচ্চা প্রজননের নির্ধারিত প্রক্রিয়া। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি রমণীদের কুমারীত্বের বর্ণনায় এসেছে যে তাদের কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি। (সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৫৬)
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি আল্লাহকে ছেড়ে শয়তান ও তার বংশধরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছ?’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৫০)
এই দুই আয়াত থেকে জিনদের যৌনাকাঙ্ক্ষা ও বংশ প্রজননের বিষয়টি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।

জিনদের ধর্ম কী

জিন জাতি আল্লাহর মাখলুকের মধ্য থেকে একটি মাখলুক। মহান আল্লাহ তাদের রব। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ ও জিন, তোমরা তোমাদের রবের কোনো অবদানকে অস্বীকার করতে পারবে?’
আর প্রত্যেক নবী নির্দিষ্ট অঞ্চলের তৎকালীন মানুষ এবং জিনদের হেদায়েতের বার্তাবাহক হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘ওহে মানুষ ও জিন, আমি কি যুগে যুগে তোমাদের কাছে নবী প্রেরণ করিনি…?’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩০)
যেহেতু মহানবী (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বজগতের জন্য নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন, তাই বর্তমান জিনদের জন্য শরিয়তে মোহাম্মদী তাদের ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে।

জিনদের ধর্মীয় বিধি-বিধান

মানুষের মতো জিনদের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় অনুশাসনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাদের ইহকালীন কৃতকর্মের জন্য হাশরের ময়দানে নিজ নিজ কর্মের হিসাব দিতে হবে। সৎকর্মশীলদের জন্য জান্নাত এবং মন্দ কর্মের জন্য অপরাধীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৪)

মানবদেহে জিনের অনুপ্রবেশ!

আশ্চর্য হলেও সত্য যে জিনরা মানবদেহের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করতে পারে। এমনকি মানুষের জ্ঞানবুদ্ধির ওপরও প্রভাব ফেলে তাকে বিকারগ্রস্তও করে ফেলতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় দণ্ডায়মান হবে, যেমন শয়তানের আছর (কুপ্রভাব) কাউকে বিকারগ্রস্ত করে ফেলে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
তদ্রূপ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘শয়তান তোমাদের দেহে অনুরূপ বিচরণ করে, যেমন রক্ত দেহের সর্বত্র প্রবাহিত হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮২)

জিনরা কি অদৃশ্য বিষয়ে জানে?

আসমান ও জমিনের কোনো অদৃশ্যের সংবাদ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তবে অনেক দৃশ্যমান বিষয় জিনরা অদৃশ্য থেকে অবলোকন করে তা বর্ণনা করে, যা অনেকে অদৃশ্যের খবর বলে মনে করে থাকে। এটা নিছক ভুল ধারণা।

সৎকর্মশীলদের ওপর জিনের কুপ্রভাব পড়ে না

জিন মানবদেহে প্রভাব বিস্তার করতে পারলেও নেককার মুসলমানদের ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়। পবিত্র কালামে পাকে জিন ও শয়তানের উদ্দেশে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যারা আমার একনিষ্ঠ বান্দা, তাদের প্রতি তোমার কোনো প্রভাব কার্যকর হবে না।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৪৩)
তাই দেখা যায়, ধর্মীয় ব্যাপারে উদাসীন লোকেরাই জিন ও শয়তানের কুপ্রভাব ও কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে থাকে। হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে, টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পাঠ না করলে দুষ্ট জিনরা তার গোপনাঙ্গ নিয়ে খেলা করে। অনুরূপ খাদ্য গ্রহণের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না পড়লে খারাপ জিন তার খাদ্যে অংশগ্রহণ করে।
মহান আল্লাহ আমাদের জিন ও শয়তানের কুপ্রভাব থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়ীগেট, খুলনা।

খুলনা গেজেট/কেএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!