দেড় মাসে যশোরের চৌগাছায় শিশু ও নারীসহ অন্তত ৪০ জন কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে এক প্রকার আতংক নিয়ে দিন পার করছে উপজেলাবাসী।
উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রতি দিনই মানুষ কিংবা পশুপাখি কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। সংঘবদ্ধ কুকুরের দল গৃহপালিত পশুপাখি ধরে টেনে ছিড়ে খেয়ে ফেলারও অভিযোগ আছে। খাদ্য সংকটে এ সকল বেওয়ারিশ কুকুর দিনদিন হিংস্র হয়ে উঠেছে বলে অভিমত অনেকের।
কুকুর, হোক সে পোষা কিংবা বেওয়ারিশ সকলের কাছেই অত্যান্ত পরিচিত একটি প্রাণী। এই পরিচিত প্রাণীটি এখন আতংকের এক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন কিংবা রাত বেওয়ারিশ কুকুর দলবেঁধে প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ওলি-গলি, নদের ধার, মাঠ ঘাটে চরে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই আক্রমণ করছে মানুষ কিংবা গৃহপালিত পশুপাখির উপর।
চৌগাছা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাসে কুকুরের আক্রমণে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন-চাঁদপাড়া গ্রামের আশাদুল ইসলাম (৩৫), জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের সাগর হোসেন (২৬), বল্লভপুর গ্রামের বিপুল হোসেন (১৮) ও হারুন মিয়া (৩৮), বলিদাপাড়া গ্রামের নেহা (৯), বেড়তাহেরপুর গ্রামের আজিম উদ্দিন (৮), দক্ষিন কয়ারপাড়া গ্রামের ইউনুচ আলী (৩৮), মাশিলা গ্রামের আছিয়া খাতুন (২৫), ছোট কাঁকুড়িয়া গ্রামের আরাফাত (৭), সলুয়া গ্রামের মাহিন হোসেন (১০), কুঠিপাড়া মহল্লার নুরজাহান (২৮), নিরিবিলিপাড়ার রুম্পা খাতুন (১৭) ও আলতাফ হোসেন (৪৮), মোহাম্মদপুরের রোহান (১১), চন্দ্রপাড়ার অহিদ আলী (৪৫), আন্দারকোটা গ্রামের নুরুল আমিন (৪২), চৌগাছা পৌর সদরের আব্দুল হামিদ (৪৮), শিশু আনহা (৬), মারিয়া খাতুন (৬), মালিহা খাতুন (৫), জারা খাতুন (৬), রুহুল কুদ্দুস (৪৮), স্বরুপদাহ গ্রামের আড়াই বছরের শিশু উর্মি খাতুন, ঘোপপাড়ার ফরিদা খাতুুন (৩৭), কান্দি গ্রামের রিতা খাতুন (২২), রাজাপুর গ্রামের জাহানারা বেগম (৪০), বড়খানপুর গ্রামের ফিরোজ হোসেন (২৮), জগদীশপুর গ্রামের রহমত আলী (৩৯), হাজরাখানা গ্রামের রহিমা বেগম (৫৬), চন্দ্রপাড়া গ্রামের রিফাত হোসেন (১১), চাঁদপাড়া গ্রামের বৈশাখী (৯), জগন্নাথপুর গ্রামের তুষার (১৩), আড়াদাহ গ্রামের সালমা খাতুন (৩৫), নগরবর্ণী গ্রামের রাব্বি (২৮) ও সুফিয়া (৩৮) এবং মাজালী গ্রামের শিশু বর্ষন কুন্ডু (৬)।
কুকুরের আক্রমণে যে শুধু মানুষ আহত হচ্ছে এমনটি না, সংঘবদ্ধ কুকুরের দল গৃহপালিত পশু পাখি ধরে খেয়ে ফেলছে। পৌর এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, দু’সপ্তাহ আগে দুপুরের পরপরই কপোতাক্ষ পাড়ে একটি ছাগল ৮/১০টি কুকুরে ধরে ফেলে। এরপর টেনে ছিড়ে ওই ছাগলটিকে কুকুরের দল খেয়ে নেয়।
ডাকবাংলো মহল্লার বাসিন্দা ইসমোতারা বলেন, প্রায় দিনই দলবেধে চলা কুকুর এই মহল্লার পোষা প্রাণীর উপর আক্রমণ করছে। উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের গৃহবধু রিক্তা খাতুন জানান, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তার ৪টি রাজহাঁস সংঘবদ্ধ কুকুরে খেয়ে ফেলেছে, এছাড়া বেশ কিছু মুরগীর বাচ্চাও কুকুরে ধরে খেয়ে ফেলেছে।
কুকুরের কামড়ে আহত পৌরসভার নিরিবিলিপাড়ার বাসিন্দা আলতাফ হোসেন জানান, বাইসাইকেল যোগে তিনি বিশ্বাসপাড়া মহল্লাতে একটি জরুরী কাজে যান। স্থানীয় মসজিদ সংলগ্নে পৌছানো মাত্রই একদল কুকুর পাশের গলি থেকে সড়কে দৌড়ে আসে। কুকুরের সাথে ধাক্কা লেগে তিনি সাইকেল থেকে পড়ে যান। এসময় কুকুর তাকে কামড়িয়ে আহত করে।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা জানান, যুগযুগ ধরে প্রতিটি পাড়া মহল্লাতে কুকুর বসবাস করে আসছে। আগে কখনও কুকুরের এতো রাগ ছিলনা। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে তখন কুকুরের পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার ছিল। কিন্তু আধুনিকতার কারণে খাদ্য সংকটে পড়েছে কুকুর, তাই দিন যত যাচ্ছে ততই তারা হিংস্র হয়ে উঠছে। এ সব বেওয়ারিশ কুকুরের খাবারের ব্যবস্থা করলে হয়ত হিংস্রতা কমে আসবে।
চৌগাছা পৌরসভার স্বাস্থ্য সহকারী আবু সাঈদ জানান, দিন যত যাচ্ছে ততই যেন কুকুরে কামড়ানো রোগী বাড়ছে। সপ্তাহে রবি, সোম ও বৃহস্পতিবার আক্রান্ত ব্যক্তিদের পৌরসভা হতে ভ্যাকসিন দেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই