রাশিয়ার সেনাবাহিনী রাজধানী কিয়েভ থেকে সরে যাওয়ার পর ৯০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষের মরদেহ পাওয়া গেছে। রুশ সেনারা সপ্তাহ খানেক আগে এসব এলাকা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৫০টি মরদেহ বুচা শহরে পাওয়া গেছে।
কিয়েভ পুলিশের প্রধান আন্দ্রি নিবেতভ শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, মরদেহগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে।
নিবেতভ আরও বলেন, শেভচেঙ্কো গ্রামের কিছু মানুষের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তারা একেবারেই সাধারণ জনগণ। দুর্ভাগ্যবশত তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। পরে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, সাদা বাহুবন্ধনী পরেও রাশিয়ার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাননি কিছু মানুষ। রুশ বাহিনী শহর দখল করতে এসে স্থানীয় যেসব মানুষদের তল্লাশি করেছে তাদেরকে সাদা বাহুবন্ধনী দিয়ে চিহ্নিত করত। যাদেরকে আগে তল্লাশি করা হয়েছে তাদেরকেও সাদা বাহুবন্ধনী পরানো হতো। গুলি থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য আমাদের নাগরিকরা এই বাহুবন্ধনীগুলো নিজেরাই পরতেন।
তিনি বলেন, যেসব স্থানে শিশুরা থাকত সেখানকার মানুষ তাদের বাসস্থানের বাইরে সাদা কাপড় ঝুলিয়ে রাখতেন। কিন্তু সাদা বাহুবন্ধনী পরা সবসময় কাজ করত না।
এদিকে শনিবার ভোরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। এরপর দেশটির বেশিরভাগ অংশে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্ফোরণের খবর নিশ্চিত করা যায়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদেমির জেলেনস্কি বলেছেন রাশিয়ার আগ্রাসনে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজারের মতো ইউক্রেনীয় সেনা নিহত ও ১০ হাজারের মতো সেনা আহত হয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, এ সময় ১৯ থেকে ২০ হাজার রুশ সেনা নিহত হয়েছে। যদিও মস্কো গত মাসে বলেছিল যে এক হাজার ৩৫১ রুশ সেনা নিহত ও ৩ হাজার ৮২৫ জন আহত হয়েছে।
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিয়াপোলেও ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। ৪ লাখ লোকের শহর মারিয়াপোল বর্তমানে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। হাজারো বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। শহরটিতে আটকা পড়েছেন বহু মানুষ।
কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া তাদের একটি শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ হারিয়েছে। কৃষ্ণসাগরে ডুবে যাওয়া জাহাজটির নাম মস্কভা। এটিটি ডুবে যাওয়ার পেছনে দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দাবি, তাদের সামরিক বাহিনী কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নৌবহরের এ ফ্ল্যাগশিপে মিসাইল হামলা চালিয়েছে।
জাহাজটি হারানোর পর থেকে কিয়েভে রুশ হামলার পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। ফলে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় তাদের বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন দেশটির বহু নাগরিক। কয়েক দফা যুদ্ধ বিরতির আলোচনা হলেও ফল পাওয়া যায়নি। ফলে প্রতিদিনই ইউক্রেনের কোথাও না কোথাও মরছে মানুষ।
খুলনা গেজেট/ এস আই