জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহার করতে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ বলে জানিয়ে দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির নির্দেশে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের সেই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত কয়েক বছর শীর্ষ আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছিল।
চার বছর পর সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে সেই মামলার রায় ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। এই রায়ের ফলে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরাট জয় পেল মোদি সরকার।
এদিন ভারতীয় সময় বেলা ১১ টা থেকে এই মামলা প্রসঙ্গে রায় পড়া শুরু করেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। রায়ে কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তের পক্ষেই রায় দিয়েছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের সিদ্ধান্ত কোনো মতেই অবৈধ নয়। তা বৈধ এবং সাংবিধানিক। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে জম্মু কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের মাধ্যমে যত সম্ভব জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে লাদাখের বহাল রাখার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কারণ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩ রাজ্যের একটি অংশকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হিসেবে তৈরি করার অনুমতি দেয়। প্রধান বিচারপতির এই রায় সম্মতি দেন বিচারপতি গাভাই ও বিচারপতি সূর্যকান্ত। তবে ভিন্নভাবে সামন্তলার রায় দেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কৌল ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
প্রধান বিচারপতি এদিন রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, কেন্দ্রের সব সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না, ৩৭০ অনুচ্ছেদ (যার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল) ছিল সংবিধানের এক সাময়িক ব্যবস্থা। প্রধান বিচারপতি রায় পড়তে গিয়ে আরো বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব নেই, ভারতের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেই তা করা হয়।
শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি চলাকালীন যুক্তি ছিল জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভাকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে এই বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা বাতিল করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি। সেই প্রসঙ্গেও এদিন বিচারপতিদের সাংবিধানিক বেঞ্চ স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয়। জম্মু-কাশ্মীরের যে পৃথক সংবিধান ছিল তার প্রস্তাবগুলি মানার কোন বাধ্যবাধকতা ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিল না। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষমতায় রয়েছে। রাজ্যের অনুমোদন না নিয়ে কেন্দ্রের কথামতো রাষ্ট্রপতির পদক্ষেপ এক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে অবৈধ নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন নেই। বিধানসভার মতামত মানতে বাধ্য নয় সংসদ।
একইসঙ্গে এদিন সাংবিধানিক বেঞ্চ ভারতের নির্বাচন কমিশনকে আগামী ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ফের রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে জম্মু-কাশ্মীর।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায়দানকে কেন্দ্র করে জম্মু কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই আগেভাগেই কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয় জম্মু-কাশ্মীরকে।
এদিকে কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর জানান, তিনি হতাশ। তবে আশাহত হননি। ওমরের কথায়, ‘‘আমি হতাশ। তবে আশাহত নই। আমাদের লড়াই জারি থাকবে। বিজেপির এই জায়গায় পৌঁছতে বহু বছর সময় লেগেছে। আমরাও দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।’’
খুলনা গেজেট/এনএম