খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

কাশিয়ানীতে নৌকার ভরাডুবি

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউ.পি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এ উপজেলায় দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠিত ৭টি ইউপি নির্বাচনের মধ্যে ৫ টিতে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা। মাত্র ২টি ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা জয়ী হয়েছে। পরাজিত ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীতায়ও আসতে পারেননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিরা মনে করছেন মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা, স্বজনপ্রীতি ও জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ায় এ লজ্জাজনক হার হয়েছে। আর সাধারন ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন বলেও মনে করছেন তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর)বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার মধ্যদিয়ে কাশিয়ানী উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি’র সংসদীয় আসন–১ এর আওতাধীন ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। আর প্রেসিডিয়াম মেম্বার শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপি’র সংসদীয় আসন-২ এর অন্তর্গত ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

দলীয় মনোনয়ন দেয়া ৭ ইউনিয়নের মধ্যে কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খোকনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী মশিউর রহমান খান। এখানে মোহাম্মদ আলী খোকন আনারস প্রতিকে ৯০৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আর মশিউর রহমান খান নৌকা প্রতিকে পেয়েছেন ৫৩৬৯ ভোট।

সাজাইল ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কাজী জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাবুবুল আলমের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মাহাবুবুল আলম মোটরসাইকেল প্রতিকে ৬৬১২ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাজী জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতিকে পেয়েছেন ৪৩১০ ভোট।

পারুলিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মোটরসাইকেল প্রতিকে ২২৪২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিল্লাল হোসেন টেলিফোন প্রতিকে ১৬৪২ ভোট পেয়েছেন।

মাহমুদপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক মিরাজ চশমা প্রতিকে ১৫১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাক আলী অটোরিক্সা প্রতিকে ১৪৩৫ ভোট পেয়েছেন।

রাতইল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুরুল ইসলাম আনারস প্রতিকে ৩৪৫৩ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডেভিড সুরঞ্জন বিশ্বাস থেকে এগিয়ে রয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ও তার নেতা-কর্মিরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল দেয়ায় একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহন স্থগিত রয়েছে।

মহেশপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকে লুৎফর রহমান মিয়া ৪৬৩৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতিকের আবুল বাসার মোল্লা পেয়েছেন ৩৮৪৪ ভোট।

রাজপাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকে মিল্টন মিয়া ৪৩২৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেলিফোন প্রতিকের সাইফুল সরদার পেয়েছেন ২২৯৯ ভোট।

উন্মুক্ত ৭ ইউনিয়নের ফুকরায় অটোরিক্সা প্রতিকে শাহ ইশতিয়াক পটু বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

নিজামকান্দি ইউনিয়নে টেলিফোন প্রতিকে কাজী নওশের আলী বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

পুইশুর ইউনিয়নে টেলিফোন প্রতিকে কামরুল ইসলাম সিকদার বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

বেথুড়ী ইউনিয়নে চশমা প্রতিকে ইমরুল হাসান মিয়া বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
হাতিয়াড়া ইউনিয়নে চশমা প্রতিকে দেব দুলাল বিশ্বাস বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
সিংগা ইউনিয়নে মটর সাইকেল প্রতিকে রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস বেসরকারিভাবে চেয়ার‌ম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সাথে কথা বলে জানাগেছে, তৃণমূলের মতামত না নিয়েই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যে সব ব্যক্তিকে সাধারন ভোটরা অপছন্দ করেন তাদের হাতে নৌকা তুলে দেয়া হয়েছে। তাই সাধারন ভোটরা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন।

কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, কাশিয়ানীর ৭ ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন সঠিক ছিলো। কিন্তু নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কালো টাকার বিনিময়ে ভোটারদের প্রভাবিত করে জয়ী হয়েছে।

কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেছেন, আমাদের নেতা-কর্মির অভাব নেই, কিন্তু জনগন এতো ক্ষিপ্ত হলো কেন বুঝতে পারছি না। কিছুটা ব্যক্তি ও কাজের গাফিলতি আছে বলে মনে হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া প্রার্থী স্থানীয়দের পছন্দ না হওয়ায় সম্ভবত এ ভরাডুবি হয়েছে। এ বিষয়ে খুব শীঘ্র আমরা বসবো এবং পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করবো বলেও তিনি জানান।

কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এর মধ্যে আওযামী লীগের ৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ৪৯ জন।

আজ শুক্রবার বিকেলে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিতদের ফলাফল পাওয়া গেছে।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!