অসাবধান হয়ে বিদ্যুতের প্লাকে কোনো প্লাক লাগাতে গিয়ে কিংবা ঘরের ছোটখাট বিদ্যুতের কাজ করার সময় যে কেউই কারেন্ট শক বা ইলেকট্রিকেল শক খেতে পারেন। হঠাৎ এ ঘটনা ঘটার কারণে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
এমনকি কারেন্ট শক খাওয়ার পর সঠিক ব্যবস্থা না নিলে আক্রান্তের প্রাণ যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। তাই কারেন্টে শক খাওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কী করা জরুরি, তা সবারই জেনে রাখা উচিত।
এ বিষয়ে ভারতের কলকাতার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রুদ্রজিৎ পাল জানান, কারেন্ট শক খাওয়ার বিষয়টিকে অনেকেই হেলাফেলা করে, তবে এটি কিন্তু সবসময়ই প্রাণঘাতী সমস্যা। তাই কারেন্ট নিয়ে হেলাফেলা করবেন না।
বিদ্যুতের শক থেকে বার্ন, হার্টের সমস্যা ও নার্ভের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এ নিয়ে সাবধান থাকা জরুরি। না হলে রোগীর জীবন বাঁচানো মৃশকিল হতে পারে।
পুড়ে গেলে কী করণীয়?
কারেন্টের শকে অনেকের দেহের কিছুটা অংশ পুড়ে যায়। এই পরিস্থিতির শিকার হলে প্রথমেই ওই জায়গা খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে স্থানটি পরিষ্কার করুন।
তারপর সেখানে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল কোনো মলম লাগাতে হবে। এরপর চিকিৎসকের কাছে যত দ্রুত সম্ভব যেতে হবে। তিনিই রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি দেখে পোড়ার সমস্যা সমাধানের কিছু ওষুধ ও মলম দেবেন।
বিশ্রাম নিলে শরীরের ঝিমঝিম কমবে
কারেন্টের শক খাওয়ার পর অনেকেরই গা, হাত-পা ঝিমঝিম করে। এই পরিস্থিতিতে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হবে ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। তবে বিশ্রাম নেওয়ার পরও শারীরিক অস্বস্তি না গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হার্টের সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
এই বিশেষজ্ঞ জানান, কারেন্ট শকের কারণে হার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এক্ষেত্রে অনিয়মিত হার্টবিটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি রোগী অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন আবার হৃদস্পন্দনও থেমে যেতে পারে। এমন লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আর ইলেকট্রিক শক খেয়ে রোগীর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে তাকে দ্রুত সিপিআর দিতে হবে। এক্ষেত্রে বুকের মাঝ বরাবর চাপ দেওয়ার পর আক্রান্তের মুখে মুখ লাগিয়ে ফুঁ দিন। এভাবেই তার প্রাণ বাঁচতে পারে।
নার্ভের ক্ষতি হতে পারে
কোনো কারণে কেউ যদি নিয়মিত কারেন্ট শক খান, তাহলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে ইলেকট্রিকের কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এ ধরনের সমস্যায় পড়েন।
কারণ তারা মাঝেমধ্যেই ইলেকট্রিক শক খান। আর নার্ভের সমস্যার কোনো চিকিৎসা নেই। এক্ষেত্রে সচেতনতাই হতে পারে প্রধান চিকিৎসা।
কারণ্টে শক খেলে কী করবেন, আর কী করবেন না?
কেউ কারেন্ট শক খেলে দ্রুত সেখানকার বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করুন। কারেন্ট বন্ধ না করে ভুলেও তাকে স্পর্শ করবেন না। এতে আপনিও কারেন্ট শক খাবেন।
যদি এতে কাজ না হয় তাহলে শুকনো খবরের কাগজ, উলের কাপড়, শুকনো কাঠের টুকরো অথবা রাবার দিয়ে ইলেকট্রিক শক খাওয়া ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে বিদ্যুতের উৎস থেকে আলাদা করতে হবে। যদি কিছুতেই কাজ না হয়, তাহলে দ্রুত বৈদ্যুতিক অফিসে খবর দিন।
এরপর আক্রান্তের শারীরিক পরিস্থিতি দেখুন। তিনি সুস্থ থাকলে চোখে ও মুখে পানি দিয়ে বিশ্রাম নিতে বলুন। আর যদি তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
খুলনা গেজেট/এনএম