ইসরাইলের কারাগারের অন্তরাল থেকেই ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দী ও ফাতাহ নেতা মারওয়ান বারগুছি জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানিয়েছে।
যদি তার প্রার্থিতা গ্রহণ করা হয়, তবে বারগুছি হবেন প্রথম প্রার্থী যিনি ইসরাইলের কারাগারে থেকে ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় ইন্তেফাদার সময়কালে ইসরাইলে হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীর ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ করা ফাতাহ দলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিডল ইস্ট আইকে বলেন, বারগুছি নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তা করছেন। ফাতাহ নেতাদের মধ্যে বর্তমানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
এর আগে ২০০৫ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসা ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নতুন করে নির্বাচন করবেন। সংবাদমাধ্যম আল আরাবি নিউজের কাছে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাতাইইয়া এই কথা জানান।
ফাতাহর আভ্যন্তরীণ বিবাদ
মাহমুদ আব্বাসের আনুষ্ঠানিক মেয়াদ ২০০৯ সালের জুনেই শেষ হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৬ বছরে শেষ কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেনি।
৮৫ বছর বয়সী মাহমুদ আব্বাস জানুয়ারির শুরুতে নতুন পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেন। জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মূল দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অবসানের প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে। হামাস অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা উপত্যকা শাসন করে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফাতাহর ভেতরে আলোচনা চলছে কী করে কোনো প্রকার আভ্যন্তরীণ বিবাদ ছাড়াই বারগুছিকে প্রেসিডেন্টের প্রার্থিতায় মনোনয়ন থেকে বাদ দেয়া যায়। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একইসাথে ফাতাহ দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার বদলে বারগুছিকে প্যালেস্টিনিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তাব দেয়া হবে। ১৯৯৬ সাল থেকেই তিনি এই কাউন্সিলের সদস্য।
বারগুছির জন্য বিকল্প একটি পথ হতে পারে নিজের রাজনৈতিক দল তৈরি করে ওই দলের ব্যানারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া।
মিডল ইস্ট আইকে বারগুছির পরিবার জানায়, তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে কায়রোতে নির্বাচনের বিষয়ে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের পর বারগুছির এই বিষয়ে অবস্থান নিশ্চিত করা যাবে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জনপ্রিয়তা
১৯৫৮ সালে পশ্চিম তীরের কোবার গ্রামে জন্ম নেন মারওয়ান বারগুছি। বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ার সময়ে তিনি ফাতাহর যুব আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৬ সালে ফাতাহর সদস্য হওয়ার তিন বছর পর তিনি ইসরাইলি বাহিনীর হাতে প্রথম গ্রেফতার হন।
১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সময়কালে প্রথম ইন্তেফাদার সময় সক্রিয় ছিলেন বারগুছি। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতার করে সাত বছরের জন্য জর্দানে নির্বাসনে পাঠায়। কিন্তু অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৪ সালেই পশ্চিম তীরে ফিরে আসেন বারগুছি। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম প্যালেস্টিনিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং দ্বিতীয় ইন্তেফাদায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথিত হামলার ষড়যন্তের অভিযোগে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০০৬ সালের ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে বারগুছি জেল থেকে অংশ নেন। এ সময় তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় ঐক্যমতের লক্ষ্যে জাতীয় চুক্তি দলিলের খসড়া তৈরিতে সাহায্য করেন।
প্রায় ২০ বছর কারাগারের অন্তরালে থাকলেও, বারগুছি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়। প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের জনমত জরিপ অনুসারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলে, ফাতাহ দলের প্রার্থী হোন বা নতুন কোনো দলের প্রার্থী হোন, মারওয়ান বারগুছি নির্বাচনে জিতবেন।
মিডল ইস্ট আইয়ের সাথে এক কর্মকর্তা বলেন, ফাতাহর বর্তমান সমর্থকদের অর্ধেকেই আব্বাসের বিপরীতে বারগুছিকে পছন্দ করেন। তাদের মধ্যে যেকোনো প্রকারের দ্বন্দ্ব দলে নতুন করে বিভেদের সৃষ্টি করতে পারে।
তবে সকল কিছুর আগে ফিলিস্তিনের নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলে জানান এই কর্মকর্তা। সূত্র : মিডল ইস্ট আই।
খুলনা গেজেট/কেএম