খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

কলারোয়া ও দেবহাটা মুক্ত দিবস আজ, নানা কর্মসূচি গ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আজ ৬ ডিসেম্বর, বুধবার সাতক্ষীরার ‘কলারোয়া ও দেবহাটা মুক্ত’ দিবস। একাত্তরের এই দিনে পৃথকভাবে পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয় কলারোয়া ও সীমান্তের দেবহাটা এলাকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়ার ৩৪৩ জন বীরসন্তান অংশ নেন। এর মধ্যে শহিদ হন ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দিবসটি উপলক্ষে কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা যায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া এলাকা ছিল ৮নং সেক্টরের অধীন। এই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদ। কলারোয়ায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি বড় ধরনের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বরের বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধে ২৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। শহিদ হন ১৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া ১৭ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার কাকডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণের মুখে পাকসেনারা কাকডাঙ্গা ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয়। এরপর এপ্রিলে পাকবাহিনী কলারোয়ার পালপাড়ায় হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যা করে ৯ জন কুম্ভকারকে। এর আগে ২৭ আগষ্ট সমগ্র চন্দনপুর এলাকা পাকবাহিনী মুক্ত হয়। কলারোয়ার বীর যোদ্ধাদের লাগাতার সফল অপারেশনের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী। পাক হানাদাররা যখন বুঝতে পারলো যে তাদের পরাজয় নিশ্চিত ও আসন্ন তখন তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনা করে।

এরই অংশ হিসেবে একাত্তরে ৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২ টা ১ মিনিটে কলারোয়ার বেত্রবতী নদীর লোহার ব্রীজ মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে নদী পার হয়ে এসে কলারোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণে আনেন। সময় তখন ভোর ৫ টা ১৫ মিনিট। এভাবে একেকটি সফল অপারেশনের মধ্য দিয়ে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কবল থেকে কলারোয়ার মাটিকে মুক্ত করেছিলেন ৬ ডিসেম্বরের এই দিনে।
কলারোয়া এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধ পরিচালনা করেন সেখানকার দুই বীর যোদ্ধা প্রয়াত কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ও কমান্ডার আব্দুল গফফার। কলারোয়া এলাকায় পাক-বাহিনীর আক্রমণে সর্বপ্রথমে শহিদ হন মাহমুদপুর গ্রামের আফছার সরদার।

কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা জানান, ৬ ডিসেম্বর দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপজেলা কমান্ড বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ৭ টায় জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন, সকাল পৌনে ৮ টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সকাল ১০টায় একাত্তরের বেশে বিজয় শোভাযাত্রা, সকাল সাড়ে ১০ টায় কলারোয়া পরিষদ মিলনায়তনে স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তিকামী বাংলার বীর সেনানীদের কাছে পরাজিত হয়ে একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর এই দিনে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা ছেড়ে চলে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আর হানাদার মুক্ত হয় ভারত সীমান্তবর্তী ঐতিহাসিক দেবহাটা উপজেলা।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র দেবহাটা উপজেলা ছিল ৯নং সেক্টরের অধীনে। ৯ নম্বর সেক্টর গঠনে অসামান্য অবদানের কারণে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাষ্টারকে এ সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা ও সাব সেক্টর কমান্ডারের খেতাব দেয়া হয়েছিল। ৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল। ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের নেতৃত্বেই এ অঞ্চলের যুবকেরা দেশ মাতৃকার টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

সেসময় দেবহাটার খানজিয়া ক্যাম্প, দেবহাটা ক্যাম্প, টাউনশ্রীপুর ক্যাম্প, সখিপুর ক্যাম্প, পারুলিয়া ক্যাম্প, কুলিয়া পুরাতন বাজার ও পুষ্পকাটি ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনারা খাঁটি গড়ে তুলেছিলেন।

উপজেলার টাউনশ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধের আগে এক রাজাকার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পৌঁছে দিয়েছিল। ফলে পাকসেনারা চারিদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলেছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন । প্রায় দুই ঘন্টা টানা যুদ্ধে পাকসেনারা পরাস্ত হয়। এছাড়া ভাতশালাসহ বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন প্রয়াত ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার।

ভাতশালা যুদ্ধের শেষের দিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন বীর মুক্তিযোদ্ধ গোলজার। সেখানেই মারা যান তিনি। এক পর্যায়ে টাউনশ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়। তখন প্রধান সেনাপতি এম.এ জি ওসমানী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও সেক্টর কমান্ডার এম.এ জলিল- সকলে মিলে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারকে নিয়ে বিজয়োল্লাস করেন। তবে পাক সেনারা দেবহাটা ছেড়ে যাওয়ার সময় শাহজাহান মাস্টারের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

অক্টোবর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী খানজিয়া ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। তারা যাওয়ার সময় ওই এলাকায় বেশ কিছু এ পি মাইন পুতে রেখে যায়। পরে সেই মাইন অপসারণ করতে গিয়ে বিস্ফোরণে আব্দুল ওহাব শহীদ হন। পরে পারুলিয়া, সখিপুর ও কুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। তারা চলে যাওয়ার সময় বহু মানুষের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে এবং পারুলিয়া ব্রীজটি ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছিল। এভাবে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে দিনটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, র‌্যালি, আলোচনা সভা, ৯ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!