খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

কলারোয়ায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ৬৬লাখ টাকা আত্মসাতে ব্যবস্থাপক বরখাস্ত, চারজনকে শোকজ

কলারোয়া প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক বদরুল আলম ও ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীনকে সাময়িক বরখাস্ত ও জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুন, অফিস সহকারী কামরুজ্জামান ও শিব প্রসাদ বৈদ্যকে কারণ দর্শানোর নোর্টিশ প্রদান করা হয়েছে।

ব্যাংক ও ভুক্তভোগী সূত্র জানিয়েছে, উপজেলায় ২০১৪ সালে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় আমার বাড়ি আমার খামার। সরকারিভাবে পরিচালিত হওয়ায় উপজেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে এই সমিতি। সর্বশেষ অডিট অনুযায়ী-উপকারভোগী সদস্যদের সঞ্চয়ের টাকা জমা না
দিয়ে ও সদস্যদের নামে ঋণ উত্তোলন করে গ্রাহকদের ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা আত্মসাত করা হয়।

কলারোয়া উপজেলার পাচপোতা গ্রামের মোখলেসুর জানান, তিনি ২০১৪ সালে একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির সদস্য হন। প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকাও জমা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়ার বই আজও পাননি। উল্টো অফিস থেকে এসে বলে গেছে তার নামে ৪৫ হাজার টাকার ঋণ উঠানো হয়েছে। কিন্তু ঋণের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

একই গ্রামের শাহিনুর জানান, সমিতির কর্মকর্তারা তার বাবা, ভাই ও বোনের নামে ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন। তারা কোন ঋণ নেয়নি। হরিণা গোয়লচাতর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান-তিনি কখনও অফিসে যাননি। কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষরও করেননি। অথচ তার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। সদস্য বই তার বাড়িতে আছে। কিভাবে এই ঋণের টাকা দেওয়া হলো ? আর কে উঠালো ? তা তিনি জানেন না।

রিক্তা খাতুন নামে আরও একজন জানান-তার নামেও ঋণ উঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি জানেন না। আবার ফাহিমা ইয়াসমীন ও আজিজুর রহমান নামে দু’জন জানান, তারা ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা সুদসহ পরিশোধও করেছেন। কিন্তু টাকা অফিসে জমা হয়নি। একই অভিযোগ করলেন কলারোয়া উপজেলার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের লাভলী খাতুন, কবিরুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, শাহিনুর, কবিরুলসহ ১৩২৪ জন সদস্য। তাদের সবার নামেই ঋণ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা জানেন না। সম্প্রতি আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঢাকা অফিস থেকে অডিট অফিসাররা উপকারভোগীদের এলাকা পরিদর্শন করলে গ্রাহকরা এসব তথ্য জানতে পারেন।

এদিকে, সাবেক কলারোয়া শাখা  ব্যবস্থাপক বদরুল আলম বলেন, তিনি কোন টাকা আত্মসাৎ করেননি। যারা টাকা নিয়েছে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তবে তার মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন।

তবে ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীন জানান, বদরুল আলম শাখা ব্যাবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালিন কেঁড়াগাছি সমিতি থেকে ১৬ লাখ  ৮৫ হাজার টাকার ভুয়া ঋণ সদস্যদের নামে উত্তোলন করেন।

বরখাস্ত হওয়া  রিজিয়া পারভীন আরো জানান, ইতোমধ্যে তিনি কিছু টাকা ফেরতও দিয়েছেন। তবে তার নিকট অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হচ্ছে। তার পক্ষে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না। তিনি সর্বমোট ৩৭ লাখ টাকার মত নিয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক ও উপজেলা সমন্বয়কারী বদরুল আলম ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা তার নিকট থকে ধার হিসেবে ও ১৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ভুয়া ঋণের টাকা নিয়ে নেন।

সাবেক ব্যবস্থাপক এখন আর রিজিয়া পারভীনের মোবাইল কল রিসিভ করেন না। সে কারণে ভুয়া ঋণের টাকা তিনি পরিশোধ করতে পারছেন না। ইতোমধ্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক শেখ আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৬৩৮ টাকা অনিয়োমের অভিযোগে প্রধান শাখা থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াা হয়েছে।

কলারোয়া উপজেলা পল্লী সংঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শিরীন সুলতানা জানান, কেঁড়গাছি ইউনিয়ন ভুয়া ঋণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আত্মসাৎকৃত গ্রাহকদের ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকার বিষয়ে ইতোমধ্যে ২জনকে সাময়িক বরখাস্ত ও ৩জনের নামে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। আমি অফিসে যোগদান করার পরে অত্র কার্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা আনয়ন করেছি। পাশাপাশি অফিসে কর্মরত জুনিয়র অফিসার, ফিল্ড অফিসার ও অফিস কর্মচারিদের সমিতির সদস্যদের সঞ্চয় ও ঋণের টাকা এখন নিয়ম অনুযায়ী বিতরণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী বিশ্বজিত সরদার সমিতির সদস্যদের নামে সঞ্চয় ও ঋণের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানান, কলারোয়া শাখার কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম সমিতি থেকে ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক বদরুল আলম ও ফিল্ড অফিসার রিজিয়া পারভীনকে সাময়িক বরখাস্ত ও জুনিয়র অফিসার সালমা খাতুন, অফিস সহকারী কামরুজ্জামান ও শিব প্রসাদ বৈদ্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে শৃঙ্খলা বিভাগ।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!